প্রস্তাবটা একবার ভেবে দেখবেন প্লিজ? ।। মোটাদাগের কথা
সম্ভবত ২০১৪ সালের কথা চ্যানেল আই আমাকে দিয়ে দ্বিতীয় নাটক বানাবে এই জন্য আমি ইবনে হাসান খানের সাথে মিটিং শেষ করে কবি নির্মলেন্দু গুনদা'র মেয়ে প্রডিউসার মৃত্তিকা গুনের সামনে বাজেট নিয়ে কথা বলছি আর চা খাচ্ছি। মৃত্তিকা বলল
- টিটো ভাই আপনে অনেক ভালো লেখেন সন্দেহ নাই, কিন্তু এই গল্পটা আমার কাছে একটু কেমন যেন লাগছে।
- কোনটা বলেন তো....
- কি হয়েছে বলেন তো শুনি....
- মানে এই যুগেও একজোড়া জুতা কেনার টাকা ম্যানেজ করতে পারে না। এমনটা হয় নাকি? আমার কাছে অবিশ্বাস্য লাগছে। এটা এখন আর সম্ভব না।
বুঝলাম ও আসলে গল্পটা একটা গাঁজাখুরি গল্প বলতে চাচ্ছে। আমি ওয়াসরুমে যাওয়ার কথা বলে আমার টিম নিয়ে চলে এলাম। সিদ্ধান্ত নিলাম চ্যানেল আইয়ের সাথে আর কাজ করব না। পরে অবশ্য জানলাম আমার ঐ গল্প থেকে শহিদুল আলম সাচ্চু ভাই নাটক বানিয়ে চ্যানেল আইতেই চালিয়েছেন। যাক সে কথা।
গতকাল (লেখাটি বছর দুই আগে লেখা, তখন আব্বু বেঁচে ছিলেন) আমি আব্বু আম্মুকে মহাখালী বক্ষব্যধি হাসপাতালে খাবার পৌঁছে দিয়ে 'এই রোদে হাঁটলে কেমন লাগে' বোঝার জন্য টি.বি গেট থেকে কারওয়ান বাজারের উদ্দেশ্যে হাঁটা শুরু করলাম। রোদের তেজ বুঝতে পারলাম। যখন ফার্ম গেট আসলাম তখন মনে হলো এখন এক গ্লাস পানি না খেলে পরে যাব। আমি রাস্তার পাশের দোকান থেকে পরপর দুইগ্লাস হীমশিতল পানি খেয়ে পকেট থেকে একটা দুই টাকার নোট বের করে দিতেই দোকানদার বলল
- আরো দুই টাকা।
- কেন?
- হ, এহন দুই ট্যাকা কইরা দিতে ঐবো।
ঠিক এমন সময় আমার মতো আরেকজন এসে আমার মতোই পরপর দুই গ্লাস পানি খেয়ে ফেললো। সেও একটা দুইটাকার কয়েন বের করে দিতেই দোকানদান তার সাথেও একই আর্গুমেন্ট করল। আমি দুই গ্লাস পানি খেয়ে চারটাকা দিতে পারলেও ঐ লোক দিতে পারলো না। সরল ভাবে বলল
- ভাই আমার কাছে তো আর কোন টাকাই নাই।
আমি একটু ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলাম। বয়সে আমার মতোই। এলোমেলো চুল। পায়ে একজোড়া চপ্পল, জিন্সের প্যান্টের সাথে একটা ঢলঢলে রংচঙে শার্ট গায়ে। তবে সে যে কাজ করে খায় তা বুঝতে পারলাম। দোকানদার তার সাথে তর্ক শুরু করে দিলো।
লোকটা বলছে 'ভাই আমার কাছে আর টাকা নেই। আমি জানতাম না যে এক গ্লাস পানির দাম দুই টাকা হইয়া গেছে। তাহলে আমি এক গ্লাস পানিই খেতাম। আমার কাছে সত্যিই আর টাকা নেই'। আমি লোকটিকে বললাম
- ধরেন আপনি আমার বাসায় গেছেন পানি খাইতে, আমি আপনাকে পানি খাওয়ালাম। আমি দুটাকা দিচ্ছি। কেমন?
লোকটা একটু লজ্জা পেলো। আমি আবার হাঁটা শুরু করলাম।
মনে মনে ভাবছি এই দৃশ্যটি দেখলে কবি নির্মলেন্দু গুনের মেয়ে মৃত্তিকা গুণ কী বলত? এক গ্লাস পানি কিনে না খেতে পারার মতো মানুষও আছে। জুতা তো পরের গল্প। আচ্ছা এই যে গরমকে পুঁজি করে এক গ্লাস পানির দাম দু'টাকা নিচ্ছে এই লোকটার মুখে দাড়ি, মোচ কামানো, মাথায় গোল টুপি উনি কি মহা পাপ করছেন না? ওনার তো পাপবোধ আমার চেয়ে বেশী থাকার কথা, কারণ আমি ধর্মকর্ম করি না। উনি শুক্রবার মসজিদে যান, বয়ান শোনেন। তারপরও পাপবোধ তৈরি হয়নি। আহারে....!

ফিল্টারের পানি বলতে রাস্তার পাশে নীলচে বোতলে করে যে পানি বিক্রি হয় তা কি আসলে আদৌ পিউরিফায়েড? মোটেই না। এই পানিগুলো আসলে সরাসরি ওয়াসার পানিই। আমাকে আমার এক পরিচিত পানি ব্যবসায়ি নিজেই বলেছিলো। এই নীল বোতলের পানির বিজনেসের মূলধন আসলে আধিপত্ব। যার ক্ষমতা যত বেশী সে ততটা ভালো বিজনেস ম্যান হবে। এলাকার দোকান অফিস আদালতে তার বোতল যাবে। লোকাল পাওয়ার না থাকলে এ ব্যাবসার অযোগ্য আপনি। অনেকটা ঝুট ব্যবসার মতো। এই পানি একেক বোতল দোকানদার কেনে ত্রিশ থেকে চল্লিশ টাকায়। এই সিজনে সেই একই নীল বোতলের পানি দোকানদার বিক্রি করছে ২০০ টাকায়। এটা নিয়ে কেউ কখনও কোথাও কোন কথা বলেছে তা আমার চোখে পরেনি। যে যার মতো করে ব্যবসা করে যাচ্ছে। কোন নিতীমালা আছে বলে মনে হয়না।
যে কারণে লেখাটা লিখছি সেটা হলো আমার একটা প্রস্তাব আছে- বাজারে নানা কোম্পানী আছে যারা বোতলজাত পানি বিক্রি করে। পারটেক্স প্রুপ, আফতাব গ্রুপ, প্রান আরএফএল, ফ্রেস এমনকি ওয়াসাও বোতলজাত পানি বিক্রি করে। সেই সাথে গাজী, সেরা, দেশ, মদিনা এরা বিক্রি করে পানির ট্যাঙ্ক। ইউনি লিভার বিক্রি করে পানির ফিল্টার। এরা প্রতিদিন টিভিতে, রেডিওতে, পেপারে, ইন্টারনেটে কোটি কোটি টাকার বিজ্ঞাপন দেয়। আচ্ছা এরা সবাই মিলে ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের উদ্যোগে পথচারীকে ঠান্ডা পানি খাওয়াতে পারে না? তাতে কি এদের বিজ্ঞাপন হবে না?
আমি আমার কোন লেখা কখনও পাঠককে শেয়ারের অনুরোধ করিনি। আজ এই লেখাটা পড়ে আপনার যদি মনে হয় এতে এই গরমে মানুষের উপকার হতে পারে তাহলে লেখাটি শেয়ার করুন যাতে বিষয়টি যথাযথ কর্তৃপক্ষেরর নজরে আসে। হয়তো তারা পজেটিভলি ভাবলেও ভাবতে পারে।
সবাইকে ধন্যবাদ।
লেখক ও গণমাধ্যম কর্মী
No comments