Header Ads

CODESMITE
  • সাম্প্রতিক লেখা:

    দরকার পরলে ঘরের সবাই মিলা মোছলমান হইয়া যামু ভাই, তারপরও নিজের দ্যাশ ছাইড়া ইন্ডিয়া যাইতেচাই না

    আমার ছাত্রজীবনে যে শিক্ষকের কাছে বেশী অপদস্থ হয়েছি তার নাম আব্দুল লতীফ ফরায়েজী। উনি আমাদের বাংলা আর ইসলামিয়াত পড়াতেন। তবে বাংলাক্লাসেও উনি ইসলামী কথা বলে ইসলামের নানা বীরত্বপূর্ণ গল্প করে সময় পার করতে অধিক পছন্দ করতেন। উনি রবীন্দ্রনাথঠাকুর-এর লেখা একদম পছন্দ করতেন না। ওনার কাছে রবীন্দ্রনাথ ছিলেন বে-দ্বীন। 






    আমাদের ক্লাসে রিপন নামে একটা ছেলে ছিলো, আমাদের সবার চেয়ে বয়সে বড়। লেখাপড়ায় একটু দূর্বল থাকলেও ধর্ম কর্মে আর গায়পায়ে আমাদের চাইতেও বেশ এগিয়ে ছিলো। ওর গলায় সব সময় কাঠের মালা ঝুলত আর কথায় কথায় 'রামরাম' বলত। আমাদের সাফা স্কুলের সকল ছাত্রছাত্রীকে বৃষ্টির দিনে কাদা ভেঙে স্কুলে আসতে হতো বলে বৃষ্টির সময়ে কেউ আর ইউনিফর্মের ধারধারতনা। কেউকেউ লুঙ্গি পরেও ক্লাস করত। সাফার পাশের গ্রাম তেঁতুল বাড়িয়ার ছেলে ছিলো রিপন বাড়ৈ।  

    একদিন বৃষ্টিতে ভিজে কাদায় বোধ করি তার সকলধর্মনিরপেক্ষ পোষাক ভিজে যাওয়ায় রিপন একখানা ধুতি পরে ক্লাস করছিলো। আমরা সেটা নিয়ে সাধ্যমতো রসিকতা শেষে যখন বাংলা ক্লাসে মননিবেস করার চেষ্টা করছি তখনই গোল বাধিল। বখতিয়ার খলজি ভক্ত লতীফ ফরায়েজীর ক্লাসে রিপনের ধুতি পড়ে ক্লাস করার কোন অধিকার নেই। উনিরিপনকে ক্লাস থেকে বের করে দিয়ে চারখলিফার গুনগান সম্বলিত বয়ান শুরু করলেন। আমি জানালা দিয়ে তাকিয়ে দেখলাম রিপন তার নচ্ছার ধুতির খুট দিয়ে তালাকপ্রাপ্তা নারীর মতো চোখ মুছছে। কেন জানি না আমার চোখ ফেটে জল আসল। আমার মনে হলো পাজামা-পাঞ্জাবি পরা অব্দুললতীফ ফরায়েজী রিপনের সাথে চরম অন্যায় করছে।  

    আব্বুর সাথে আমার ইতিহাস ঐতিহ্য নিয়ে আলাপ গল্প হতো ছোট বেলা থেকেই। আব্বু আমাকে বলেছেন ধুতি কোনভাবেই হিন্দুদের আলাদা ধর্মীয় পোষাক না। আব্বুর দাদানানা নাকি ধুতি পরতেন। আমার দাদাও নাকি ধুতি পরতেন ।আব্বু বলে 'আরে লুঙ্গি আমাগো বাঙ্গালীর পোষাক না, লুঙ্গী হইলো মগেগো পোষাক। আমাগো পোষাক হইলো ধুতি।' আমি ক্লাস শেষে বিষয়টি নিয়ে আব্বুর সাথে কথা বললাম। সারাজীবন টুপিপাঞ্জাবি পরে কাটানো প্রচন্ড ধর্মনিরপেক্ষ বাবাকে বিষয়টি নাড়া দিলো। তিনি ঐস্কুলের সহকারী প্রধানশিক্ষক হওয়ায় প্রশাসনের যায়গা থেকে হয়তো লতীফ ফরায়েজীকে জিজ্ঞেস করেছিলেন। তারপর থেকে মিতা হওয়া সত্বেও আব্বুর সাথে আর ঐ স্যারের কোন ভালো সম্পর্ক ছিলোনা। আমি যতদিন ঐ স্কুলে ছিলাম বাংলা আর ইসলামিয়াতে আমার ভালো নম্বর আমার জোটেনি।

     রিপন এরপর সম্ভবত স্কুল ছেড়ে দিয়েছিলো। বেশ কয়েক বছর পর শুনলাম রিপন নাকি 'দ্বীনের' পথে এসেছে। অর্থাৎ রিপন মুসলমান ধর্ম গ্রহন করেছে। রিপনের সাথে তারপর আর কখনও দেখা হয়নি। তবে রিপনের আমার কমন ফ্রেন্ডের সাথে আজ থেকে পনের আগে দেখা হলে রিপনের কথা জানতে চেয়েছিলাম। জানালো সেও রিপনের খবর জানেনা, তবে ধর্মান্তরের খবর সেও শুনেছে। কিন্তু কারণ জানে না। আজ এতদিন পর কেন এইকথাবলছি? কারণ আছে। আমি গতকাল শাহবাগ গিয়েছিলাম। সেখানে শুনলাম একজন ফোনে বলছে 'দরকার পরলে ঘরের সবাই মিলা মোছলমান হইয়া যামু ভাই, তারপরও নিজের দ্যাশ ছাইড়া ইন্ডিয়া যাইতে চাইনা'। কাকে কি উদ্দেশ্যে উনি একথা বলছিলো আমি জানি না, কিন্তু মনে হলো দেশটা ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে গিয়েছে।

    সাইফুল বাতেন টিটো
    লেখক ও গবেষক

    No comments