Header Ads

CODESMITE
  • সাম্প্রতিক লেখা:

    তার কাছে আমি প্রায় প্রতিদিনই অমানুষিক বর্বরতা ও নির্যাতনের শিকার হয়েছি ।। শাকের আহমেদ, সাবেক কওমি মাদ্রাসার ছাত্র

    নির্লজ্জতার সীমা কতদূর গড়ালে মাদ্রাসার শিক্ষকেরা ছোটো শিশুদের এমন নির্যাতন করতে পারেন, আল্লাহ ভাল জানেন।

    গতকালের ভাইরাল হওয়া ভিডিওটি দেখে অনেকেই শিহরিত হলেও আমি শিহরিত হইনি, পরিস্থিতি আমাকে শিহরিত করেনি। নির্মমতার অনেক কিছু দেখেছি মাদ্রাসায় পড়ার সময়, সয়েছিও তারচে বেশি। সংবাদপত্রে এসেছে আরেক ছেলের মৃত্যুর খবর, তা দেখেও অবাক হইনি। গত ছ' মাস আগে টাঙ্গাইলেও এরকমের এক নাটক ঘটেছিল। এক শিক্ষকের যৌন নির্যাতনে মারাও গিয়েছিল ভুক্তভোগী শিশু। সমাজের কথায় সে শিক্ষককে বিদেয় করা হলেও ভুক্তভোগীর পরিবার অথবা পুলিশ কেউ মামলা করেনি। সাংবাদিকেরাও কথা বলেননি এ নিয়ে, পরে সে ঘটনা দিব্যি ধামাচাঁপা পড়ে যায়।




    বাবা আমাকে সেসময় ফোন করে এ ঘটনা জানালেও স্পষ্ট করে জানিয়েছিলেন না। কিন্তু ক'দিন আগে বড়ো ভাই আসল ঘটনা আমাকে জানিয়েছেন।

    আমার অপ্রকাশিত দিনলিপিতেও অনেক নির্মম নির্যাতনের গল্প পড়ে আছে। নির্লজ্জতা, নৃশংসতা, নিষ্ঠুরতা ও পাগলামো কাকে বলে সে এসব নির্যাতনের পড়লে হয়ত খানিকটা বোঝা যাবে। তার একটি এরকম-

    পড়ুনঃ দিনের পর দিন শিকল দিয়ে আটকে রাখা হত যেন আবার না পালিয়ে যায় ।। সৌরভ আসলাম, সাবেক হেফজখানার ছাত্র

    তখন আমি টাঙ্গাইলে পড়ি, দেলদুয়ারের মুশুরিয়া মাদ্রাসায়। 'আল-জামিয়াতুল ইসলামিয়া বাইতুল উলূম' এ মাদ্রাসার নাম।

    আমার ভর্তি হবার ছ' মাস পর এক নতুন শিক্ষক এলেন। তাঁর নাম রেজাউল করিম। আমার বড়ো অপছন্দের, ঘৃণার, বিদ্বেষের একজন হয়ে উঠলেন তিনি অল্প ক'দিনেই। তার কাছে আমি প্রায় প্রতিদিনই অমানুষিক বর্বরতা ও নির্যাতনের শিকার হয়েছি। সেসব ভাবলে শরীর এখনও শিহরিত হয়ে ওঠে, অনেক দুঃখ হয়।

    প্রতিদিন এমন অকথ্য নির্যাতনের-প্রহারের শিকার হয়ে ধীরে ধীরে আমি আবিষ্কার করি ওসব আমার সহনীয় হয়ে উঠছে। এখনও হয়ত খুঁজলে পিঠে হাতে ওসব নির্যাতনের-  চিহ্ন পাওয়া যাবে, আমার মনে হয়। গোরুকেও হয়ত মানুষেরা এভাবে পেটায় না, কোনওদিন দেখিনি। যেভাবে রেজাউল আমাকে পেটাত, প্রতিদিন, প্রহার করত। ওসব লিখে বলে বোঝানো একেবারেই নিরর্থক, স্রেফ সামান্য ধারণা হয়ত দেয়া যাবে। অবস্থা মাঝেমধ্যে এমন হত- পেটাতে পেটাতে সে আমাকে বসা থেকে ওঠাত, পেছনে পেছনে দৌড়োত। আমি চিৎকারও করতে পারতাম না।

    পড়ুনঃ আপনার সন্তানকে মাদ্রাসায় নয়, ইশকুলে পাঠান ।। গাজী গোফরান, সাবেক হেফজখানার ছাত্র

    বলত, চিৎকার করলে আরও পেটানো হবে, তখন চিৎকার না করে থাকার চেষ্টা করতাম। আবার কখনও দৌড়োতেও নিষেধ করত, আরও বেশি পেটানো হবে বলে। তখন নিশ্চুপ, নিশ্চল, নির্বাক, নির্বিকার ও স্থির হয়ে শুধু সে নির্যাতন সয়েই যেতে হত। সে আবার এই বলে নিতম্বে পেটাত, ওখানে পেটালে যেন লজ্জায় কাউকে দেখাতে না পারি। অনেক সময় পেটাত পায়ের তেলোতেও, যেন পেটানোর কোনও চিহ্ন না থাকে। বাবা মা'র কাছে ওসব কথা বলাও কড়া মানা ছিল, একটু বলেছি অথবা বাবা মা এ ব্যাপারে জেনেছেন হলে সে যদি তাঁর একটু জানা হয়, তাহলে আর রক্ষা নেই। হয়ত মৃত্যু নিশ্চিত ছিল। আল্লাহ জানেন।

    সে ভয়ে কাউকে ওসব বলারও সাহস পেতাম না।

    নির্মমতা নির্লজ্জতার কাহানি এখনও শেষ হয়নি।

    পেটানোর সময় দৌড়োবার অপরাধে উল্টো করে প্রায়শ ও হাত পা একত্র করে ধরে পায়ের তেলোয় আর নিতম্বে পেটাত। দৌড়োলেও অপরাধ, কান্না করলেও অপরাধ, তাই নির্যাতন সওয়া ছাড়া কোনও উপায় থাকত না। কত বাবা বাবা বলে চিৎকার করেছি, কিছুই হয় নি। একদিন পেটাতে পেটাতে বলেওছিল 'বাবা' ডাকতে, ডেকেছিলাম। ক'দিন আগে আমি আবিষ্কার করলাম, সেই নির্যাতনে আমার শারীরিক মানসিক অনেক ক্ষতি হয়েছে, সে হিশেব হয়ত আমার জানা নেই।

    লেখকঃ শাকের আহমেদ, সাবেক কওমি মাদ্রাসার ছাত্র

    No comments