Header Ads

CODESMITE
  • সাম্প্রতিক লেখা:

    আপনার সন্তানকে মাদ্রাসায় নয়, ইশকুলে পাঠান ।। গাজী গোফরান, সাবেক হেফজখানার ছাত্র

    আমার আম্মু ও আমার সাথে এমন আচরণ করেছিল! আমি ছোট আংকেলের মাদ্রাসায় পড়তাম। তখন আমার বয়স ৯ (নয়) বছর। একটু এদিক-ওদিক হলে ছোট আংকেল আমাকে প্রচুর মারধর করতো। বাড়িতে আসলে মারধরের কথা আম্মুকে বলতাম, আব্বুকে বলার সাহস পাইতাম না! আব্বু আমাকে না মারলেও প্রচুর ভয় পাইতাম। ছোট আংকেলের মারধরের কথা গুলো বললে আম্মু আমাকে উল্টো বকাবকি করতো! ৩/৪ মাস পর একদিন দুদিনের জন্য বাড়িতে বেড়াতে আসতাম। বেড়াতে আসলে মাদ্রাসায় যেতে চাইতাম না... যতবার যেতে চাইতাম না ততবারই আমাকে ঘুম থেকে তোলে জোর করে ছোট আংকেল নিয়ে যাইতো।

     গাজী গোফরান, সাবেক হেফজখানার ছাত্র 


    হেফজ খানায় প্রতিদিন ফজরের আজানের আগে ঘুম থেকে উঠে যাওয়া লাগতো। তখন আমি ঘুমের মধ্যে প্রস্রাব করতাম। প্রতিদিন ঘুম থেকে উঠে গোসল করা লাগতো। কি শীতকাল কি বর্ষাকাল। প্রতিদিন গোসল করা লাগতো। ১৩ বছর বয়স পর্যন্ত আমি বিছানায় প্রস্রাব করেছি। (আমার প্রস্রাবের বিছানা পরিষ্কার করতেন আমার এক সিনিয়র জামশেদ ভাই। তার বাড়ি হাটহাজারী নাঙ্গল মোড়া,ছিবাতলি।) ১৩ (তেরো) বছর বয়সে আমার হেফজ কমপ্লিট! প্রতিদিন ভোরে আজান দেওয়ার আগে গোসল করে এসে মুখস্থ তিন পৃষ্ঠা করে সবক দেওয়া লাগতো। পড়া পারতাম। মাঝেমধ্যে আলসেমি করে এক পৃষ্ঠা অথবা আধা পৃষ্ঠা পড়া কম দিতাম। এই এক পৃষ্ঠা অথবা আধা পৃষ্ঠা কম কেন দিয়েছি তার জন্য আমাকে প্রচুর মারধর করতো। অনেকবার ইটের অর্ধেক ভাঙা টুকরো দিয়েও মেরেছিল। ৫/৬ (পাঁচ/ছয়) বার বেহুঁশ হয়ে গেছিলাম... একবার মেরে মাথা পাড়ায় চমকে হাসপাতালে ভর্তি করাইছিল। সাধারণত আমাকে মারতেন স্টিলের স্কেল দিয়ে। আমার মুখে এবং শরীরে এখনো অনেক কালো দাগ আছে...


    আমার হেফজ শেষ হওয়ার পরে-ও ছোট আংকেল আমাকে ছাড়তে চাইছে না! তার কাছে থাকতেই হবে! তার কাছে থেকে পড়াশোনা করতে হবে। কোনরকম ভাঁওতাবাজি করে ৫ (পাঁচ) দিনের ছুটি নিয়ে আব্বুর সাথে বাড়িতে আসলাম। এই ৫ (পাঁচ) দিনের মধ্যে আম্মুকে অনেক বুঝালাম ছোট আংকেলের কাছে আর থাকবো না। এবার আমাকে হোস্টেলে ওয়ালা একটা মাদ্রাসায় ভর্তি করাইয়া দেন। আম্মু কোনমতে রাজি হচ্ছিল না! তারপর আব্বুর পকেট থেকে ৩ (তিন) হাজার টাকা চুরি করে নানুর বাড়ির বন্ধু
    মোঃ আক্তার হোসেন
    কে নিয়ে পালিয়ে চলে গেলাম কুতুবদিয়া! ৭ (সাত) দিন পর কুতুবদিয়া থেকে ফিরে এসে শুনলাম আম্মু প্রায় পাগলের মতো হয়ে গেছিল। ফিরে আসার পরে আব্বু অনেক বকাবকি করছে। কিন্তু একটা থাপ্পড় পর্যন্ত দেয়নি। পরে আব্বু সিদ্ধান্ত নিয়েছিল ছোট আংকেলের কাছে আমাকে আর রাখবে না। আব্বু এই সিদ্ধান্তটা নেওয়ার পর সেদিন ছোট আংকেলের নির্যাতন থেকে আমি মুক্তি পেয়েছিলাম.......




    এখন ছোট আংকেলকে দেখলে সালাম ত দূরের কথা! কথা পর্যন্ত বলিনা। ইচ্ছা করেনা! অতীতের কথা গুলো মনে পরলে প্রচুর ঘৃণা এবং রাগ উঠে। তারে দেখলে মনেমনে অনেক গালাগালি করি! দুমাস আগে বড় আব্বু মারা গিয়েছিল! বড় আব্বুর মরদেহ যখন দেখতে গেছিলাম তখন ছোট আংকেলের সাথে দেখা হয়েছিল। আমার বিন্দু পরিমাণ ইচ্ছা করে নাই যে তার সাথে এক শব্দ কথা বলবো... সেদিন আমাকে বলেছিল "তোর চুল, গোঁফ দাঁড়ি এতো লম্বা কেন?" আমি সাহস করে মুখের উপর জবাব দিয়েছি, আমার চুল দাড়ি নিয়ে আপনার এতো টেনশন কেন?? আমার এই কথা শুনে হয়তো কষ্ট পেয়েছিল! আর কিছু বলেননি। পরে ছোট আংকেল চলে যাওয়ার সময় বলেছিল "বাসায় বেড়াতে যাইস" আমি আবারও মুখের উপর জবাব দিয়েছি, এই পরিস্থিতিতে কারো বাসায় যাওয়া উচিৎ নয়। জড়িয়ে ধরে পিঠের মধ্যে দুইটা থাপ্পড় দিয়ে চলে গেছে.... যাওয়ার সময় আম্মুকে বলেছিল "সেজ ভাবি আপনার ছেলে ত অনেক বড় হয়ে গেছে....!!"
    অথচ আমার সহজে কান্না আসেনা। গতকাল রাতে পিচ্চিটার মারধরের ভিডিটা দেখার পর মন খারাপ করে ঘুমিয়ে গেছিলাম। আমি জানি মাদ্রাসার হুজুরদের কাছে একটা ছেলে কতটা অসহায়
    😞😞

    সকালে ঘুম থেকে উঠে ফেসবুক ওপেন করার সাথে সাথে যখন পিচ্চিটার মা-বাবার দরখাস্তটা দেখলাম, সাথে সাথে আমার আম্মুকে মনেমনে মন্দ কথা বলেছি! পরে হঠাৎ করে চোখ দিয়ে পানি বেরিয়ে গেছে.....
    "আপনার সন্তানকে মাদ্রাসায় নয়, ইশকুলে পাঠান''

    লেখকঃ গাজী গোফরান, সাবেক হেফজখানার ছাত্র

    No comments