'বিষফোঁড়া' কোনো কাল্পনিক উপন্যাস নয় ।। শাকের আহমেদ
বিষফোঁড়া বইটি পড়ে এক মাদ্রাসার ছাত্র এই রিভিউটি লিখেছেন তার ফেইসবুক ওয়ালে। আমি এক বর্ণও পরিবর্তন না করে আমার ব্যক্তিগত ব্লগস্পটে রেখে দিলাম। আপনারা চাইলে পড়ে দেখতে পারেন।
আজ অনেক দিন পর একটি বই শেষ করলাম। সাইফুল বাতেন টিটোর নিষিদ্ধ বই 'বিষফোঁড়া'।
এই লেখকের সাথে আমার পরিচয়ের গল্পোটা অন্যরকম। আমাদের সময়ে প্রকাশিত 'মাদ্রাসায় ধর্ষণ: আমার জবানবন্দি' পড়ে তিনি আমাকে খুঁজে বের করেছেন। বললেন সেদিন। আরো অনেক কিছু বলেছেন। অন্যসময়ে সেসব নিয়ে কথা হবে।
বিষফোঁড়ার কথা বলছিলাম। বইটা আরেক দিন পড়তে চেয়েও শেষ হয় নি। ভূমিকাসহ অল্প কয়েক পৃষ্ঠা পড়ে রেখে দিয়েছিলাম। আজ পুরোটা শেষ করেছি। একটুখানি পেছন থেকে বলতে গেলে, কাল থেকে একটু পড়তে মনে চাচ্ছিল, অনেক দিন হয়ে গেছে বাংলা বই-টই পড়ছি না। তাই হুমায়ূন আজাদের 'দ্বিতীয় লিঙ্গ' পড়া শুরু করলাম। চল্লিশ-পঁয়তাল্লিশ পৃষ্ঠা পরার পর ভাল্লাগল না। তারপর বিষফোঁড়া ধরে শেষ করে ফেললাম। এইই আজকের গল্পো। এখন বিষফোঁড়া নিয়ে দু'একটা মন্তব্য করছি। মন্তব্যের প্রতিটিই আমার পক্ষে বা লেখকের পক্ষে যাবে এমন না। বিপক্ষেও যাবে। সাধারণতই। কারণ, টিটো সাহেবের সাথে আমার চিন্তা-ভাবনার দুরত্ব অনেক। তাই এ নিয়ে বিতর্ক করলে ভালো লাগবে।
-বিষফোঁড়া নিয়ে একটি ইতিবাচক মন্তব্য করতে চাই প্রথমে। নইলে মানুষেরা আমাকে গাল দেবেন। মন্তব্য করতে যেহেতু বসেছি ভালো-মন্দ সবি করতে হবে। মন্তব্যটা হলো বিষফোঁড়ার লেখক অন্য দশজন ঔপন্যাসিকের মত মিথ্যে কল্প-কাহিনী দিয়ে তাঁর বইয়ের পৃষ্ঠাগুলো পুরেন নি। উপন্যাস অর্থই যেখানে কাল্পনিক গাল-গল্পো। সেখানে তিনি কল্পনা নয়, নিথ্যো ও নয়। নব্বুই-পঁচানব্বুই ভাগই সত্য লিখেছেন। এ মন্তব্যটা লেখকের জন্য প্রসংশার।
-বিষফোঁড়া বইটি আমার কাছে অনেকটা হুমায়ূন আজাদের 'পাক সার জমিন সাদ বাদ' -এর মত লেগেছে। পুরোটা বলছি না, অনেকটা। পাক সার জমিনে' যেভাবে হুমায়ূন আজাদ ইসলামের প্রতি এক ধরণের ক্ষোভ, বিদ্বেষ এবং ঘেন্নার প্রকাশ ঘটিয়েছেন, জনাব টিটো সাহেবও সেরকম কিছুটা ক্ষোভ, বিদ্বেষ এবং ঘেন্না প্রকাশের চেষ্টা করেছেন বিষফোঁড়ায়। অবশ্য এ ক্ষেত্রে তিনি হুমায়ূন আজাদের মত বাড়াবাড়ি করতে পারেন নি বা সেরকম বাড়াবারি করার প্রয়াস পান নি। এ নিতান্তই আমার নিজস্ব মন্তব্য, অন্য কেউ হয়ত ভিন্ন কোনো মন্তব্য করবেন।
-সাইফুল বাতেন টিটো তাঁর বইয়ে আমাদের দেশের প্রচলিত মাদ্রাসাগুলোকে 'বিষফোঁড়া'র সাথে তুলনা করতে চেয়েছেন এবং করেছেনও।
এ আলোচনায় আমি তাঁর সাথে একেবারেই একমত হতে পারি নি। এ ক্ষেত্রে আমি বলতে চাই, কোনো অপরাধের জন্য নির্দিষ্ট কোনো প্রতিষ্ঠান বা শ্রেণীকে দোষারোপ করা বড্ড মূর্খতা। একটু স্পষ্ট করে বলি, ছাত্রলীগের কেউ যদি কিছু চুরি করে, সেক্ষেত্রে ছাত্রলীগের সাথে সংশ্লিষ্ট সবাইকে চুরির তকমা লাগানো যেমন জুলুম। অথবা বিএনপির কেউ যদি ধর্ষণ করেন এ ক্ষেত্রে বিএনপি অথবা বিএনপি সংশ্লিষ্ট লোকদেরকে জড়ানো যেমন পাগলামো। তেমনি মাদ্রাসার কোনো শিক্ষক শিশু-নির্যাতন করলে সে-ও অনেকটা এরকম পাগলামোর অন্তর্ভুক্ত হবে। এতদিন পরও যেহেতু আমরা মাদ্রাসার শিশু-নির্যাতন ও সমূহ-অনিয়ম নিয়ে উল্লেখযোগ্য কিছু করতে পারি নি, সে থেকে দোষ আমাদের ওপরও অনেকটা বর্তায়। তাই এ ক্ষেত্রে উল্লেখিত মূলনীতির ওপর অবিচল থাকা সম্ভব হয় নি।
মোদ্দাকথা, অপরাধের সাথে শুধু অপরাধীই জড়িত থাকবে। তৎসংশ্লিষ্ট কোনো মানুষ অথবা প্রতিষ্ঠানকে জড়ানো যাবে না।
-জনাব টিটো সাহেব মাদ্রাসাগুলোকে বিষফোঁড়ার সাথে তুলনা দিয়ে অস্পষ্টভাবে মাদ্রাসাগুলোর মূলোচ্ছেদের কথা বোঝাতে চেয়েছেন। আমি মূলোচ্ছেদের পক্ষে নই, সংস্কারের পক্ষে। মাদ্রাসার নীতিনির্ধারকেরা এবং তৎসংশ্লিষ্ট শীর্ষস্থানীয় লোকেরা বিতর্কিত সমূহবিষয়ে কথা বলে যথোপযুক্ত ব্যাবস্থা নিলে সবকিছুরই নিরসন হবে। কিন্তু দুঃখের বিষয় কেউ কিছু বলতে চাচ্ছে না এসব বিষয়ে। জানি না কখনো তাঁদের হুঁশ হবে কি না। না সারাজীবন বিতর্ক শোনেই কেটে যাবে। আল্লাহ মালুম।
আরো মন্তব্য হয়ত করা যেত। কিন্তু আমি অনেক ছোটো মানুষ। যা লিখেছি, সেও হয়ত অতিরিক্ত হয়ে গেল না কি কে বলবে। আজ এ পর্যন্তই থাক।
শাকের আহমেদ মাদ্রাসার ছাত্র
বিষফোঁড়া উপড়ে ফেলতে হয়। ক্যান্সারও তাই। মাদ্রাসা নামধারী এ জাতীয় সকল প্রতিষ্ঠান হলো আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থার ক্যান্সার। সেটাকে লেপেপুছে যত্ন বা সংস্কারের কোন সুযোগ নেই, উপড়ে ফেলতে হবে। এদেশের আগামী প্রজন্মকে রক্ষা করতে এ বিষয়ে কোন উঁ-আঁ নাই। লেখকের উপন্যাসের বিষয়বস্তু বা বর্ণনাশৈলি নিয়ে আলোচনা সমালোচনা এক কথা, কিন্তু তার সাথে মাদ্রাসা শিক্ষার সংস্কার, যথোপযুক্ত ব্যবস্থা এসব আলাপ অবান্তর। মাদ্রাসা নামক প্রতিষ্ঠান, পাকিস্তান নামক রাষ্ট্র, জামাতে ইসলামী নামক দল- এগুলির জন্ম একই সূত্রে গাঁথা। এরা ক্যান্সার, এদের বিলুপ্তিই হলো এই অঞ্চলের প্রধান সংস্কার।
ReplyDelete