নভেম্বরে কওমী মাদ্রাসায় ধর্ষণের শিকার ২৬ শিশু, নির্যাতিত ৪ জন; পঙ্গু ১
নতুন
একটি মাস, নতুন কিছু ধর্ষণের সংবাদ। গত মাসে অর্থাৎ নভেম্বর ২০২০-এ বিভিন্ন কওমি মাদ্রাসা,
মক্তব ও মসজিদে ধর্মীয় শিক্ষক দ্বারা ধর্ষণের শিকার হয়েছে মোট ২৬টি শিশু। যার মধ্যে
২৪টি ছেলে শিশু ও ২টি মেয়ে শিশু। নির্মম নির্যাতনের শিকার হয়েছে ৪টি শিশু, চিরতরে পঙ্গু
হয়ে গেছে একটি শিশু। প্রত্যেক মাসের মতো এ মাসেও সংবাদগুলো নিয়ে কিছু পর্যবেক্ষণমুলক
কথা লিখছি।
৩ নভেম্বর ২০২০ এ সময়টিভির একটি সংবাদের শিরনাম ‘নাঙ্গলকোটে হাত-পা বেঁধে মাদ্রাসা ছাত্রকে
বলাৎকার’। নারায়ণগঞ্জের ঘটনা এটি। শুক্রবার (৩০অক্টোবর)
অক্টোবর মাসে মাদ্রাসায় ৩৩ শিশু ধর্ষণ ও ৬৬ শিশু অমানবিক নির্যাতনের শিকার!
বিকেলে
মাদ্রাসা ছাত্রটি উত্তর শাকতলী গ্রামের একটি পরিত্যক্ত মৎস্য প্রজেক্টে ঘুরতে যায়।
সেখানে আনা মিয়া ওই ছাত্রটিকে একা পেয়ে তার হাত পা বেঁধে জোরপূর্বক মাছের প্রজেক্টের
পরিত্যক্ত স্যালো মেশিন ঘরে নিয়ে ধর্ষণ করে। এই আনা মিয়া কিন্তু হাফেজ নয় বা কোনো মাদ্রাসার
শিক্ষকও নয়। একজন ব্যবসায়ী। প্রশ্ন উঠতে পারে একজন ব্যবসায়ী ধর্ষণ করেছে তা আপনি এখানে
নিয়ে এসেছেন কেন? কারণ আছে। ধর্ষক আনা মিয়া ধরেই নিয়েছে একজন মাদ্রাসা ছাত্রকে তো তার
শিক্ষরেরা নিয়মিত ধর্ষণ করেই। আমি একটু করলে দোষ কী?
পরের
দিন, অর্থাৎ ৪ নভেম্বর সময় সংবাদের একটা শিরোনাম এরকম ‘লক্ষ্মীপুরে ছাত্র বলাৎকারের
অভিযোগে মাদ্রাসা শিক্ষক আটক’। সংবাদটির ভিতরে গিয়ে দেখবেন মোট ৬টি শিশুকে ধর্ষণ করেছে
সে। আমি বলি এখানেও প্রকৃত সত্যিটা বের হয়নি। আমার ধারণা সে ঐ মাদ্রাসার সবগুলো শিশুকেই
ধর্ষণ করার চেষ্টা করেছে। সবক্ষেত্রে সফল হয়নি বলে হয়তো সবকটি শিশুকেই সে ধর্ষণ করতে
পারেনি, বেশিরভাগই তার লালসার শিকার হয়েছে। সর্বশেষ শিশুটি হয়তো বলে দিয়েছে বলে বিষয়টি
সামনে এসেছে। আর যদি কেউই না বলতো তবে হয়তো সে কখনোই ধরা পরতো না। এখানে দেখুন হয় পুলিশ
তাকে জেরা করে বাকি ধর্ষণের খবর বের করেছে কিংবা শিশুদের কাছ থেকে জেনেছে। এ কথাটা
আমি আগেও বলেছি। প্রশাসনের কাছে অনুরোধ থাকবে এরপর থেকে প্রতিটি কেসের ক্ষেত্রে ঐ শিক্ষককে
ভাল করে জিজ্ঞাসাবাদ করলে আমার ধারণা আরও কতোগুলো শিশুকে ধর্ষণ করেছে তা বের করা সম্ভব।
এছাড়াও বাকি শিশুদেরকেও মাতৃসুলভ জিজ্ঞাসাবাদের মাধ্যমে তাদের কাছ থেকেও তথ্য বের করা
সম্ভব হতে পারে। প্রতিটি কেসের ক্ষেত্রে পুলিশের অবশ্যই উচিৎ হবে একটি ঘটনাকে কেন্দ্র
করে ঐ প্রতিষ্ঠানের বাকি খবর বের করা। একজন মেধাবী পুলিশ অফিসার চাইলেই এমনটা পারে
সেটা আমরা গত মাসের একটি ঘটনাতে দেখেছি।
আপনারা
ইতমধ্যেই খেয়াল করেছেন প্রতিদিনই কমবেশি এমন
ধর্ষণের খবর আমরা পাই। কোনো কোনো দিন একাধিক
খবরও পেয়ে থাকি। কিন্তু বিচারের খবর পাই কয়টা? অনেক দিন পর, গত ৫ নভেম্বর ২০২০
তারিখে দেখলাম ‘পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রীকে ধর্ষণ, মাদ্রাসা শিক্ষকের যাবজ্জীবন’। আপনারা তো প্রথম থেকেই
বইটি পড়ে আসছেন, তাছাড়া আজকাল কম বেশি সংবাদ তো সবাই পড়েন। যে পরিমান মাদ্রাসায় এই
শিশু ধর্ষণের খবর পান তার তুলনায় এই বিচারের রায়ের হার কেমন? সেটা কি আদৌ উল্লেখ করার
মতো? তার মানে এসব ধর্ষক খুব সহজেই আইনের ফাঁক দিয়ে বের হয়ে আবার কোনো না কোনোভাবে
ধর্ষণ করেই চলে।
১৪
নভম্বরের একটি সংবাদে অনেকেরই চোখ আটকে গেছে। সংবাদটির শিরনাম ‘অভিশাপ দিয়ে পাগল করে
দেওয়ার ভয় দেখিয়ে শিশুদের বলাৎকার!’। কওমি মাদ্রাসায় ধর্ষকদের শিশু ধর্ষণের এটা একটা
বহুল প্রচলিত পদ্ধতি। এমন শিরোনামও নতুন নয়। প্রায়ই দেখা যায় কোরান শরিফ চালান দিয়ে
নানা ক্ষয় ক্ষতি করবে, জ্বিন দিয়ে খুন করাবে, নানা রকম চালান দিয়ে বাবা মা পরিবারের
ক্ষতি করবে এমন ভয় দেখিয়ে কিছু হাফেজ মাওলানা শিশুদের দিনের পর দিন ধর্ষণ করে চলেছে।
এ পদ্ধতি বহুৎ পুরনো। এখন প্রশ্ন হলো এমন অযৌক্তিক,অলিক ও অসাড় ভাবনা এই শিশুটির মাথায়
ঢুকালো কে? এটা তার পারিবারিক শিক্ষা। এই শিক্ষা তার জন্মের পর থেকে যে পরিবারের প্রতিটি
সদস্যের কাছ থেকে পেয়েছে, পেয়েছে পরিবারের বাইরে তার চারপাশের প্রতিটি মানুষের কাছে।
মাহফিলে গিয়েও সে শুনেছে এক হুজুর বয়ান করছে তাকে নাকি জ্বিন মাহফিলের জন্য দাওয়াত
দিয়ে প্রায়ই নিয়ে যায়, নানা দেশের ফল, মিষ্টি এইসব এনে খাওয়ায়। এই মাহফিলের ভিডিও সবার
মোবাইলে মোবাইলে। ইউটিউবে ফেইসবুকে মিলিয়ন মিলিয়ন শেয়ার। এই কুশিক্ষা থেকে একটি শিশুকে
বাঁচাবে কে? এই বিশ্বাস তো ওর একার নয়, এদেশের ৯৫ ভাগের বেশি মানুষ বিশ্বাস করে একজন
মাদ্রাসার হাফেজের এমন বিশেষ ক্ষমতা রয়েছে। আমি যতই বই লিখি বা টকশোতে গলা ফাটাই তাতে
লাভ কী? আমার বই ওই শিশুর অভিবাবক কোনোদিনও পড়বে না; আমার টকশোও শোনে না। আমার বাসার
বর্তমানে যে নারী কাজ করে তার মেঝ ছেলে গ্রামে কওমি মাদ্রাসায় পড়ে। প্রায়ই বলে ছেলেটি
মাদ্রাসায় থাকতে চায় না। তাকে যদি আমি বলি এসব তবে সে পরের দিন থেকে আর কাজেই আসবে
না, ব্যাস।
২৪ নভেম্বর দৈনিক যুগান্তরের একটি সংবাদ আর সেই সাথে সংবাদের ছবিটি দেখে সত্যিই চোখে পানি এসে গিয়েছিলো। শিরোনামটি এরকম ‘মাদ্রাসা শিক্ষকের নির্যাতনে মেরুদণ্ড ভেঙ্গেছে শিশুটির’। ছবিতে দেখা যাচ্ছে ১২/১৩ বছরের একটি শিশু বিছানায় কুজো হয়ে বসে আছে। কোমরে একটি বেল্ট। মলিন মুখের শিশুটিকে দেখলে যে কারো বুক কেঁপে উঠবে। কী এমন দোষ করেছিলো শিশুটি যে মেরে তার মেরুদণ্ডের হাড় ভেঙে দিতে হবে? না, বিষয়টি নিয়ে কিন্তু কোনো মামলা হয়নি। যুগান্তরের সাংবাদিকের কাছে অভিযুক্ত পাষণ্ড শিক্ষক হাফেজ মো. আবু বকর মারধরের কথা বেমালুম অস্বীকার করে বলেন, দুষ্টুমি করেছে তাই একটু শাসন করেছি। ’একটু’ শাসন করেছে বলে শিশুটি চিরতরে পঙ্গু হয়ে গেছে। যদি বেশি শাসন করতো তাহলে নিশ্চই শিশুটিকে খুন করে ফেলতো। ১৪ দিন ধরে পরিবারের অগোচরে ওই শিক্ষার্থীর চিকিৎসা চলছে। বর্তমানে ওই শিক্ষার্থী হাঁটাচলা করতেপারে না।কুঁজো হয়ে হাঁটতে হচ্ছে। ছাত্র নুর জামালকে বেল্ট পরিধান করে থাকতে হচ্ছে। হয়তো আমৃত্যু তাকে এভাবেই চলতে হবে। আহারে জীবন! বাবা মায়ের মনের সাধ ছেলে হাফেজ হলে তার ঘাড়ে পা দিয়ে বেহেস্তে যাবে। কিন্তু এখন এই চিরতরে পঙ্গু শিশুটি তার বাবা মা, পরিবার সেই সাথে নিজেকে বয়ে নিয়ে চলতে পারবে? নাকি এই পঙ্গুত্ব তাকে আজীবন বয়ে বেড়াতে হবে? সবই যেন অনিশ্চয়তার গল্প। অনিশ্চিৎ প্রতিবছর কওমি মাদ্রাসা থেকে পাশ করা হাজার হাজার ছাত্রের ভবিষ্যৎ। এত পঙ্গুত্ব বয়ে বেড়াবে কীভাবে এ দেশ।
মাদরাসায় শিশুধর্ষণ ও নির্যাতন প্রতিবেদন নভেম্বর ২০২০
(বিভিন্ন
জাতীয় দৈনিক ও অনলাইন পত্রিকায় প্রাপ্ত সংবাদের ভিত্তিতে করা)
প্রতিবেদন
প্রস্তুতকারকঃ সাইফুল বাতেন টিটো
তারিখ |
শিরনাম |
পত্রিকা |
জেলা |
শিশু |
সংখা |
ধরণ |
২নভেম্বর |
ছাত্রী
ধর্ষণের মামলায়বাঁশখালীতে মাদ্রাসা শিক্ষক গ্রেপ্তার |
বিডি
নিউজ টোয়েন্টিফোর ডট কম |
চট্টগ্রাম |
মেয়ে |
০১ |
ধর্ষণ |
৩ অক্টোবর |
নাঙ্গলকোটে
হাত-পা বেঁধে মাদ্রাসা ছাত্রকে বলাৎকার
|
সময়
টিভি নিউজ অনলাইন
|
কুমিল্লা |
ছেলে |
০১ |
ধর্ষণ |
৪ নভেম্বর |
লক্ষ্মীপুরে
ছাত্র বলাৎকারের অভিযোগে মাদ্রাসা শিক্ষক আটক |
সময়
টিভি নিউজ অনলাইন
|
লক্ষীপুর |
ছেলে |
০৬ |
ধর্ষণ |
৫
নভেম্বর |
পঞ্চম
শ্রেণির ছাত্রীকে ধর্ষণ, মাদ্রাসা শিক্ষকের যাবজ্জীবন |
ঢাকা
ট্রিবিউন |
বাগেরহাট |
মেয়ে |
০১ |
ধর্ষণ
এর রায় |
৫
নভেম্বর |
রংপুরে
শিশু ধর্ষণের মামলায় ইমাম গ্রেপ্তার |
দৈনিক
প্রথম আলো |
রংপুর |
মেয়ে |
০১ |
ধর্ষণ |
৬
নভেম্বর |
ফরিদপুরে
মাদ্রাসা শিক্ষার্থীকে বলাৎকারের অভিযোগে শিক্ষক আটক |
বার্তা
বাজার |
ফরিদপুর |
ছেলে |
০১ |
ধর্ষণ |
৮
নভেম্বর |
আদর
করার কথা বলে বারবার ধর্ষণ, মাদ্রাসা শিক্ষক গ্রেফতার |
ঢাকা
ট্রিবিউন
|
নারায়ণগঞ্জ |
ছেলে |
০১ |
ক্রমাগত
ধর্ষণ |
৯
নভেম্বর |
ছাত্রকে
ধর্ষণ চেষ্টার অভিযোগ, মাদ্রাসা শিক্ষক গ্রেফতার |
বাংলা
ট্রিবিউন |
ঠাকুরগাঁওয়
|
ছেলে |
০১ |
ধর্ষণ
চেষ্টা |
১০
নভেম্বর |
মুয়াজ্জিন
কর্তৃক শিশু ছাত্রকে ধর্ষণ |
বাংলা
ট্রিবিউন |
দিনাজপুর |
ছেলে |
০১ |
ধর্ষণ |
১১
নভেম্বর |
কোরআন
শিক্ষার কথা বলে শিশু বলাৎকার, মাদ্রাসা শিক্ষক
গ্রেপ্তার |
বাংলাদেশ
প্রতিদিন |
গাজীপুর |
ছেলে |
০১ |
ধর্ষণ |
১২
নভেম্বর |
ফতুল্লায়
মাদ্রাসা ছাত্রকে ধর্ষণের অভিযোগ শিক্ষক গ্রেফতার |
বাংলা
ট্রিবিউন |
নারায়ণগঞ্জ |
ছেলে |
০১ |
ধর্ষণ |
১৪
নভেম্বর |
রৌমারীতে
কওমি মাদ্রাসায় ৮ বছরের শিশুকে নির্মম নির্যাতন |
দৈনিক
ইত্তেফাক
|
সিলেট |
ছেলে |
০১ |
নির্মম
নির্যাতন |
১৪
নভেম্বর |
অভিশাপে
পাগল করে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে শিশুদের বলাৎকার! |
বার্তা
২৪ |
কুমিল্লা |
ছেলে |
৬
জন |
ধর্ষণ |
১৬
নভেম্বর |
শিশু
বলাৎকারের অভিযোগে মাদ্রাসার শিক্ষক গ্রেপ্তার |
দৈনিক
সমকাল |
কুমিল্লা |
ছেলে |
০১ |
ধর্ষণ |
১৭
নভেম্বর |
নারায়ণগঞ্জে ছাত্রকে বেদম প্রহার অভিযুক্ত মাদ্রাসার শিক্ষক |
নিউজ
নারায়ণগঞ্জ |
নারায়ণগঞ্জ |
ছেলে |
০১ |
নির্মম
নির্যাতন |
১৭
নভেম্বর |
হবিগঞ্জেমাদ্রাসাছাত্রকে
বলাৎকারের অভিযোগে শিক্ষক আটক |
এনটিভি
অনলাইন |
হবিগঞ্জ |
ছেলে |
০১ |
ধর্ষণ |
১৮
নভেম্বর |
মাদ্রাসা
ছাত্রের হাত-পা বেঁধে পেটালেন দুই শিক্ষক |
সময় নিউজ |
নারায়ণগঞ্জ |
ছেলে |
০১ |
নির্মম
নির্যাতন |
২০
নভেম্বর |
মাদ্রাসা
ছাত্র ধর্ষণ মামলায় শিক্ষক গ্রেফতার |
বাংলা
ট্রিবিউন |
কুমিল্লা |
ছেলে |
০১ |
ধর্ষণ |
২২
নভেম্বর |
আরবি
পড়তে গিয়ে শ্লীলতাহানির শিকার শিশু, গ্রেফতার ইমাম |
ঢাকা
ট্রিবিউন |
বরিশাল |
ছেলে |
০১ |
ধর্ষণ |
২৪
নভেম্বর |
মাদ্রাসা
শিক্ষকের নির্যাতনে মেরুদণ্ড ভেঙে গেছে শিশুটির |
দৈনিক
যুগান্তর
|
বরগুনা |
ছেলে |
০১ |
নির্মম
নির্যাতন |
২৬
নভেম্বর |
২
শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগে গ্রেফতার ২ মাদ্রাসা শিক্ষক |
ঢাকা
ট্রিবিউন |
টাঙ্গাইল |
ছেলে |
০২ |
ধর্ষণ |
২৮
নভেম্বর |
গৌরীপুরে
ধর্ষণের অভিযোগে মাদ্রাসার শিক্ষক গ্রেপ্তার |
দৈনিক
প্রথম আলো |
ময়মনসিংহ |
ছেলে |
০১ |
ধর্ষণ |
লেখক ও গণমাধ্যম কর্মী
No comments