Header Ads

CODESMITE
  • সাম্প্রতিক লেখা:

    মাদরাসায় শিশুধর্ষণ ও নির্যাতনের বিশেষ প্রতিবেদন ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ।। সাইফুল বাতেন টিটো

    সংবাদ পর্যবেক্ষণ ও পর্যালোচনা

    গত মাসে যখন প্রথম লেখাটি লিখেছিলাম তখন সেই লেখায় বলেছিলাম যে বছরের শুরুর দিকে মাদ্রাসায় ধর্ষণ হত্যা নির্যাতনের সংবাদ কম পাওয়া যায়। যত দিন যায় তত বাড়তে থাকে। তার একটি উদাহরণ এই মাসে প্রাপ্ত সংবাদ। এই মাসে মাদ্রাসায় নিহত হয়েছে দুটি শিশু, ধর্ষণের শিকার হয়েছে ৭ শিশু, পাশবিক নির্যাতন চলেছে ৪ শিশুর উপর।



    প্রথমে যে ঘটনাটি দিয়ে শুরু করতে চাই সেটি ৮ ফেব্রুয়ারির সংবাদ। বিডি জর্নালের নিউজ শিরনামটি এরকমঃ ‘আরবি পড়ানোর নামে লাগাতার ধর্ষণ, অন্তঃসত্ত্বা ছাত্রী।’ এখানে একটি বিষয় লক্ষণীয়। আর তা হলো এই শিক্ষক কিন্তু সরাসরি কোনো মাদ্রাসার শিক্ষক নয়। তাহলে কেন তাকে এখানে আনলাম? কারণ ৬০ বছর বয়স্ক ধর্ষক শাহজাহান গাজী রাজশাহীর চারঘাট উপজেলার শলুয়া সরকারপাড়া মসজিদের ইমাম। অর্থাৎ তার পড়াশুনা মাদ্রাসায়। শিশু ধর্ষণের চর্চাটি তার হয়তো ওখানেই হয়েছে। পাঠকেরা একটি বিষয় খেয়াল করুন। বাংলাদেশে এখন প্রতি বর্গকিলোমিটারে ৩টির বেশি করে মসজিদ। আর সেই প্রত্যেকটি মসজিদেই রয়েছে মক্তব। মক্তবে আরবি পড়ানো হয়। আর পড়ায় ঐ মসজিদেরই ইমাম কিংবা মুয়াজ্জিন। এই মক্তব হলো শিশু ধর্ষণের আরেকটি অভয়াশ্রম। মক্তবে ধর্ষণের ঘটনা সামনে আরো আসবে তখন আবার মনে করিয়ে দেবো। খবরে প্রকাশ স্থানীয় লোকজন জানান, শাহজাহান গাজী চারটা বিয়ে করেছেন। তার মধ্যে একজনকে তাড়িয়ে দিয়েছেন। দুইজন মারা গেছেন আর একজন তার সঙ্গে রয়েছেন। বোঝাই যায় লোকটি মধ্যে যৌন বিক্রিতি রয়েছে পুরো মাত্রায়। খবরে আরো লিখেছে লোকটি ২০ বছর ধরে উপজেলার কানোছগাড়ী গ্রামে বসবাস করে আসছে। এটা দিয়ে এও বোঝা যায় যে লোকটি স্থানীয়দের কাছে বেশ আস্থাভাজ ইমাম সাহেব বলে পরিচিত ছিলো। এরা এই বিশ্বাস, আস্থা আর প্রাপ্ত মানসম্মানকে পুঁজি করেই দিনেরপর দিন এইসব করে বেড়ায়। মানুষ নিজের মানসম্মানের ভয়ে কিছু বলতে পারে না। ফলে অজানা থেকে যায় এরকম আরো লাখ লাখ মক্তবের অজানা বিভৎস গল্প।

    ৮ ফেব্রুয়ারির আরেকটি সংবাদ যা প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ প্রতিদিন সহ আরো অনেক গুরুত্বপূর্ণ দৈনক পত্রিকা। যার শিরনামঃ ‘ছাত্রীকে ধর্ষণ করে ভিডিও নিয়ে আত্মগোপনে যায় মামুন।’ ঘটনাটি আগের ঘটনার সাথে কিছুটা মিল আছে। আগেই বলেছিলাম না যে মক্তবের ঘটনা সামনে আরো আসবে। এই ভয়ঙ্কর ঘটনাটিও মক্তবের। ধর্ষণের শিকার শিশুটির বয়স মাত্র নয় বছর! একবার একটি শিশুকে ধর্ষণ করে ভবিষ্যতে তাকে আরো নিরাপদে ধর্ষণ করার জন্য এই ধর্ষকেরা প্রায়ই যে কাজটি করে সেটি হলো ভিডিও করে রাখা। ক্যামেরাযুক্ত মোবাইল ফোন সবার হাতে হাতে থাকায় অপরাধের এই নতুন ধরণটির সৃষ্টি হয়েছে। তারই শিকার নয় বছরের শিশুটি। এই ধর্ষক ধরা পরেছে বলে আমরা তার ভিডিও সম্পর্কে জানতে পেরেছি কিন্তু যেসকল ধর্ষক ধরা পরছে না তাদের মোবালে না জানি কতো শিশুর ভিডিও রয়েছে এবং দিনের পর দিন তার সাথে না জানি কতো ভয়ঙ্কর অপরাধ ঘটে চলেছে!

    ১১ ফেব্রুয়ারির একটি ঘটনা জানলে বুঝতে পারবেন একটি শিশুর সাথে মাদ্রাসায় কোন মাত্রার যঘন্য অপরাধ করে কোরানের পাখি বলে পরিচিত মাদ্রাসার শিক্ষকেরা। বিডি জর্নালের শিরনাম ‘ছাত্রকে থুথু খাওয়ালেন শিক্ষক।’ বিষয়টি একবার নিজের ক্ষেত্রে বা নিজের সন্তানের সাথে চিন্তা করে দেখুন তো! সংবাদে লিখেছে ‘একাধিক সূত্রে জানা গেছে, শ্রেণি কক্ষে পড়ানোর সময় কথা বলায় ক্ষিপ্ত হয়ে মো. ইউসুফ নামে এক ছাত্রকে বাথরুমে নিয়ে থুথু ফেলে সেই থুথু চেটে খেতে বাধ্য করে।’  জানি পড়েই আপনাদের অনেকের বমি পাচ্ছে। তারপরও পড়ুন। পুরো বইটি পড়ুন। পড়লে বুঝতে পারবেন দেশের লাখ লাখ শিশুদের সাথে প্রতিদিন কতো ভয়ঙ্কর ঘটনা ঘটে। কেন এই শিশুটির সাথে এমন যঘন্য কাজ করা হয়েছে জানেন? কারণ সে ক্লাশে কথা বলেছিলো।

    মাদ্রাসায় শিশুদের রহস্যজনক মৃত্যু এখন খুবই স্বাভাবিক একটি বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রতি মাসেই গড়ে দুই তিনটা হত্যা কিংবা অস্বাভাবিক মৃত্যুর সংবাদ পাই। গত মাসে হয়তো একটিও পাইনি, কিন্তু এ মাসে পেলাম দুটি হত্যাকাণ্ডের সংবাদ। আবার মাসনের কোনো এক মাসে হয়তো তিনটা কিংবা চারটাও পেতে পারি। পাঁচটা পেলেও অবাক হবো না। ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ এ দৈনিক জনকণ্ঠের শিরনাম ‘নরসিংদীতে শিমু আক্তার নামে এক মাদ্রাসা ছাত্রীর রহস্যজনক মৃত্যু’। সংবাদের ভিতরে ঢুকলেই বোঝা যায় এটি স্পষ্ট হত্যা কাণ্ড, পরে আত্মহত্যা বলে সাজানো হয়েছে। সংবাদে প্রকাশ মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওঃ আব্দুর রহিম ও মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা এবং মোতায়াল্লী আঃ আউয়াল ভূইয়া এমন দাবি করলে তাদের সাথে দ্বিমত পোষণ করেছেন এলাকাবাসীরা। তাদের দাবি যে বাথরুমে শিমু আত্মহত্যা করেছে বলে প্রচারনা চালানো হচ্ছে মূলতঃ আত্মহত্যা করার মতো কোন জায়গা ওই বাথরুমটিতে নেই। এ নিয়ে এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।  

    ফেব্রুয়ারি মাসে মাদ্রাসায় দ্বিতীয় খুনের সংবাদটি পাই ২০ ফেব্রুয়ারি। দৈনিক যুগান্তরের শিরনাম ‘মাদ্রাসার পুকুরে নিখোঁজ ছাত্রের লাশ, পালালেন দুই শিক্ষক’। 

    এটাযে স্পষ্টতই খুন তা বোঝাই যায় কারণ  খবরে লিখেছে ছাত্রের লাশ উদ্ধারের পর ওই মাদ্রাসার শিক্ষক আবুবকর ও হাবিবুর রহমান পালিয়ে গেছেন।   তারা তো আর এমনি এমনি পালায়নি।

    শেষ করবো ২৭ ফেব্রুয়ারি সময় টিভির একটি সংবাদ দিয়ে। যার শিরনাম ‘দুই মাদ্রাসা শিক্ষকের বিরুদ্ধে ৫ ছাত্রকে বলাৎকারের অভিযোগ।’ মাদ্রাসায় শিশু ধর্ষকদেরও সিন্ডিকেট থাকে। এই দুই ধর্ষক এক সিন্ডিকেটের। এই সিন্ডিকেদের মধ্যে সদ্ভাব না থাকলে তখন ঘটনা বাইরে বের হয়ে আসে। এখানে সংবাদে বোঝা যায় এই দুই ধর্ষকের সিন্ডিকেটকে বাঁচাতে চেয়েছিলো অপর সিন্ডিকেট। কিন্তু শিশুরা সেটা হতে দেয়নি। খবরে লিখেছে ‘ঘটনার শিকার কয়েকজন শিশু ছাত্রের পরিবারের স্বজনরা জানান, মাদ্রাসার দুই শিক্ষক নোয়াখালীর বাসিন্দা ক্বারী লোকমান হোসেন ও যশোর জেলার বাসিন্দা আজগর আলী গত দুই থেকে আড়াই মাস যাবত ৯ থেকে ১২ বছর বয়সের ৫ জন ছাত্রকে কৌশলে রাতে ঘুম থেকে ডেকে নিয়ে জোরপূর্বক বলাৎকার করে। এসময় তারা আরো কয়েকজন ছাত্রকে বলাৎকার করার চেষ্টা চালিয়ে ব্যর্থ হয়। ঘটনার পরই ঐ অভিযুক্তরা শিশু ছাত্রদেরকে বলাৎকারের বিষয়টি কাউকে জানাতে নিষেধ করেন দুই শিক্ষক। এ ঘটনা জানালে তাদেরকে মেরে ফেলারও হুমকি দেয়া হয়।’  

    ঐ যে আগে একটি খবের বলেছিলাম যে হত্যার হুমকি দিয়ে ধর্ষণ করা একটি স্বাভাবিক ঘটনা, এখানেও সেই ঘটনার সিমিলারিটি রয়েছে। এই ধর্ষকেরা যে কতোটা ভয়ঙ্কর, কুৎসিত চরিত্রের আর নির্মম হতে পারে তা বোঝা যায় সংবাদের এই অংশে। সেখানে লিখেছে ‘নির্যাতিত ছাত্রদের মধ্যে ১২ বছরের একজন ছাত্র গুরুত্র অসুস্থ্ হয়ে পড়লে তাকে পারিবারিকভাবে নিয়ে চিকিৎসা দেওয়া হয়। এদিকে এই ঘটনায় অপর এক ছাত্র জানায়, তাকে বলাৎকার করতে না পেরে বিদ্যুতের তার দিয়ে পিটিয়ে রক্তাক্ত জখম করেছে। আর এরপরেই ছাত্রদের বলাৎকারের ঘটনা অভিভাবকরা জানতে পারেন এবং বলাৎকারের শিকার ছাত্ররা মুখ খুলতে শুরু করে।’  

    কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রে যা হয় ধর্ষনের শিকার শিশুরা সহ্য করতে না পেরে প্রথমে মাদ্রাসায় যেতে অনিহা প্রকাশ করে, তারপর নিজে থেকে যাওয়া বন্ধ করে দেয়। তারপর বাবা মা জিজ্ঞেস করলে অনেক সময় পরে ঘটনা খুলে বলে।  ৮০% বাবা-মাই মনে করেন তার সন্তান মাদ্রাসায় পড়তে কষ্ট হয় বলে তাদের মিথ্যে বলছে।  ফলে এই শিশুদের দিনের পর দিন মাসের পর মাস বছরের পর বছর মুখ বুজে ধর্ষণের শিকার হতে হয়। 


    মাদরাসায় শিশুধর্ষণ ও নির্যাতনের বিশেষ প্রতিবেদন ফেব্রুয়ারি ২০১৯

    (বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক ও অনলাইল পত্রিকায় অনলাইনে প্রাপ্ত সংবাদের ভিত্তিতে করা)

    প্রতিবেদন প্রস্তুতকারকঃ Saiful Baten Tito

    তারিখ

    শিরনাম

    পত্রিকা

    জেলা

    ছেলে/মেয়ে

    শিশুর সংখা

    ধরণ

    ৮ ফেব্রুয়ারি

    আরবি পড়ানোর নামে লাগাতার ধর্ষণ, অন্তঃসত্ত্বা ছাত্রী

    বিডি জর্নাল

    রাজশাহী

    মেয়ে

    ০১

    লাগাতার ধর্ষণ

    ৮ ফেব্রুয়ারি

    ছাত্রীকে ধর্ষণ করে ভিডিও নিয়ে আত্মগোপনে যায় মামুন

    বাংলাদেশ প্রতিদিন

     

    সাভার

    মেয়ে

    ০১

    ধর্ষণ ও ভিডিও ধারণ

    ৯ ফেব্রুয়ারি

    বরিশালে মাদ্রাসা ছাত্রকে পিটিয়ে যখম করলেন শিক্ষক

    জাগো বরিশাল

     

    বরিশাল

    ছেলে

    ০১

    পিটিয়ে যখম

    ১১ ফেব্রুয়ারি

    ছাত্রকে থুথু খাওয়ালেন শিক্ষক

    বাংলাদেশ জার্নাল

    মাদারীপুর

    ছেলে

    ০১

    থুথু খাওয়ালেন

    ১২ ফেব্রুয়ারী

    মাদরাসায় শিক্ষার্থীকে বেধড়ক বেত্রাঘাত শিক্ষককে বহিস্কার

     

    নারায়নগঞ্জ নিউজ

     

    নারায়ণগঞ্জ

    ছেলে

    ০১

    বেধড়ক বেত্রাঘাত

    ১৪ ফেব্রুয়ারি

    সিদ্ধিরগঞ্জে মাদ্রাসায় ৯ বছরের ছাত্রকে অমানুষিক নির্যাতন, শিক্ষক গ্রেফতার

    প্রেস নারায়নগঞ্জ

     

    নারায়ণগঞ্জ

    ছেলে

    ০১

    অমানুষিক নির্যাতন

    ১৬ ফেব্রুয়ারি

    নরসিংদীতে শিমু আক্তার নামে এক মাদ্রাসা ছাত্রীর রহস্যজনক মৃত্যু

    দৈনিক জনকণ্ঠ

     

    নরসিংদী

    মেয়ে

    ০১

    আত্মহত্যা 

    ২০ ফেব্রুয়ারি

     

    মাদ্রাসার পুকুরে নিখোঁজ ছাত্রের লাশ, পালালেন দুই শিক্ষক

    দৈনিক যুগান্তর

     

    বাগেরহাট

    ছেলে

    ০১

    ধর্ষণ ও হত্যা

    ২০ ফেব্রুয়ারি

     

    দুই মাদ্রাসা শিক্ষকের বিরুদ্ধে ৫ ছাত্রকে বলাৎকারের অভিযোগ

    সময় টিভি নিউজ অনলাইন

    নারায়ণগঞ্জ

    ছেলে

    ০৫

    ধর্ষণ

     

     

    নিহতঃ ০২

    ধর্ষণঃ ০৭

    অমানবিক নির্যাতনঃ ০৪

    No comments