Header Ads

CODESMITE
  • সাম্প্রতিক লেখা:

    জলের কুমির ডাঙার বাঘ এবার তবে নিপাত যাক ।। মোটাদাগের কথা

    কথায় বলে জলে কুমির ডাঙায় বাঘ। এটা আমাদের দেশের একটি বেশ জনপ্রিয় প্রবাদ। প্রবাদটি ব্যবহার করা হয় এমন লোকের ক্ষেত্রে যার নানামুখী বিপদ একত্রে হাজির হয়। কিন্তু একই প্রাণী যদি মানবকুলের জন্য বাঘ কুমির দুটোর ভুমিকাই পালন করে তবে তার কি নাম হতে পারে? ভাবছেন এমন প্রাণীও আছে নাকি? হুম আছে। আপনিও সেই প্রাণীটিকে চেনেন। তার নাম শাহজাহান খান।

    প্রশ্ন আসতে পারে কিভাবে? উত্তর দিচ্ছি তার আগে একটু পুরাতন কিছু বিষয়ে চোখ বুলিয়ে নেই। নদী মাতৃক এদেশের ৩৫% মানুষ নৌপথে চলাচল করে। ১৯৯৫ সালের পর বরিশালের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে বাস চলাচল শুরু হলেও তা নৌ পরিবনে তেমন কোন প্রভাব ফেলতে পারেনি। বৈচিত্র্যপূর্ণ আবহাওয়ার এই দেশে নৌপরিবহন ব্যবস্থায় দূর্ঘটনা ঘটা অসম্ভব না। ১৯৭৬ সাল থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত সাড়ে চারশর অধিক ছোট বড় দুর্ঘটনা ঘটেছে আর তাতে নিহত হয়েছে সাড়ে পাঁচ হাজারের অধিক মানুষ। 

    পর্যবেক্ষণ করে দেখা গেছে ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত যতগুলো দুর্ঘটনা ঘটেছে তা আনুপাতিক হারে বিগত দুর্ঘটনাগুলোর চেয়ে পরিমানে যেমন বেশী তেমনি নিহতের পরিমানও বেশী। এর কারণ কি? এর কারণ ঐ শাহজাহান খান। কিভাবে? কারণ এই খাতের মালিক শ্রমিক মন্ত্রী, সবই ঐ শাহজাহান খান। নৌপথের নিরাপত্তা ও যাত্রীস্বার্থ রক্ষার দায়িত্ব এবং পরিবহনব্যবস্থা তদারকির দায়িত্ব যে মন্ত্রণালয়ের, সেই নৌমন্ত্রীর পরিবারই এই খাতের ব্যবসায় নিয়োজিত। 


    দুর্ঘটনাপীড়িত মাওয়া-কাওড়াকান্দি পথে চলাচলকারী সার্বিক শিপিং লাইনসের মালিক তার পরিবারের সদস্যরা। এই কোম্পানির লঞ্চের নাম এমভি ঐশী খান। সড়ক পরিবহন ও নৌপরিবহন খাতের শ্রমিক সংগঠনগুলো বাস ও লঞ্চ থেকে প্রতিদিন চাঁদা তোলে। শ্রমিকনেতা হিসেবে এই দায় শাজাহান খানের। আবার মন্ত্রী হিসেবে এই চাঁদাবাজি বন্ধ করার অন্যতম দায়িত্বও তাঁর। লঞ্চ ও পরিবহনমালিক, শ্রমিক-নেতা ও মন্ত্রী—এই তিন পারস্পরিক বৈপরীত্য এবং নৈতিকভাবে সাংঘর্ষিক অবস্থানে থেকেও এই দুই খাত দাবড়ে বেড়াচ্ছেন শাজাহান খান। 


    জনপ্রতিনিধি হলেও তার এই স্বার্থের দ্বন্দ্বে উপেক্ষিত কেবল জনগণ। কারণ, লঞ্চ আর সড়ক পরিবহনের ভাড়া নির্ধারণে অতীতে তাকেই মালিকদের পক্ষে সবচেয়ে সক্রিয় দেখা গেছে। এ বিষয়ে মন্ত্রীর বক্তব্য ‘পরিবারের সদস্যদের বলে দিয়েছি, ব্যবসা করবা আইন মেনে। এ ক্ষেত্রে আমি সফল।’ মাওয়া-কাওড়াকান্দি পথে চলাচলকারী এমভি ঐশী খান নৌমন্ত্রীর পারিবারিক লঞ্চ। ঐশী খান মন্ত্রীর মেয়ের নাম। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর এই লঞ্চটি নামানো হয়। মাওয়া, কাওড়াকান্দিসহ দেশের নৌঘাটগুলোর নিয়ন্ত্রক বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)। এই প্রতিষ্ঠানটি লঞ্চ চলাচলের অনুমোদন দেয়। একই সঙ্গে ভাড়া নির্ধারণ, বাড়তি ভাড়া আদায় রোধ, যাত্রীদের নিরাপত্তা, অতিরিক্ত যাত্রী বহন প্রতিরোধ করার দায়িত্বও এই সংস্থার। আর লঞ্চের নকশা অনুমোদন, নিবন্ধন এবং এর ফিটনেস ছাড় দেওয়ার দায়িত্ব সমুদ্র পরিবহন অধিদপ্তরের। দুটি সংস্থাই নৌ মন্ত্রণালয়ের অধীন দুটি বিভাগ। নৌ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, মাওয়া-কাওড়াকান্দি পথে চলাচলকারী ৮৬টি লঞ্চের অন্তত ৩৩টি অধিক পুরোনো ও ফিটনেস সনদ পাওয়ার যোগ্যতা নেই। পিনাক-৬ লঞ্চটিও এই ৩৩টির একটি। অভিযোগ রয়েছে, ডুবে যাওয়ার দেড় মাস আগে পিনাক-৬-এর অনুমোদন বাতিল করা হয়েছিল। 

    ৮৫ জন যাত্রী বহনের অনুমোদন ছিল এই লঞ্চটির। কিন্তু তা মানা হয়নি। ফলে বিআইডব্লিউটিএ এবং সমুদ্র পরিবহন অধিদপ্তরের বিরুদ্ধে দায়িত্ব অবহেলার অভিযোগ উঠেছিলো মালিকদের চাপে সরকারের পিছু হটার কথা স্বীকার করলেও দায়িত্ব পালনে স্বার্থের সংঘাতের কথা অস্বীকার করেন নৌমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘মালিকেরা শক্তিশালী। ৩৩টি লঞ্চের চলাচল বন্ধ করতে গেলে তারা ধর্মঘট করে। এরপর আমি পিছু হটেছি। তবে সময় দেন। একদিন সফল হব।" এখানে বিগত দিনে তার নেতৃত্বে বেশ কয়েকবার সফল হরতাল হয়েছে, দাবি আদায় করে ছেড়েছে সরকারের কাছ থেকে।




    এতো গেলো তার কুমিরগিরি এবার আসি ডাঙ্গায়। দেশের সবচাইতে বড় পরিবহন খাত হলো সড়ক পরিবহন ব্যবস্থা। সেখানেও বাঘরুপে রয়েছে জলের কুমির শাহজাহান খান ও তার পরিবার। ঢাকা থেকে মাওয়া ঘাট হয়ে মাদারীপুরের মধ্যে চলাচলকারী বাস সার্বিক পরিবহনের মালিকও নৌমন্ত্রীর পরিবার। এই নৌমন্ত্রীই আবার বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের কার্যকরী সভাপতি। দেশের ইতিহাসে এই প্রথম বোধহয় শাহজাহান খানই মন্ত্রী থাকা অবস্থায় সফল ভাবে হরতাল পালন করল। একজন নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি সরকারের মন্ত্রনালয়ে থেকে কি করে হরতাল পালন করে? তাও আবার আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে রাজপথে নেমে? এটা আদালত অবমননা নয়? এতে কি সরকারের ভাব মুর্তি উজ্জল হয়েছে? দেশ সেবার ব্রত নিয়ে মন্ত্রী হয়েছে কিন্তু তাকে ছাড়া কি দেশ চলবেই না? মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে আকুল আবেদন, শাহজাহান খানকে এবার অবসরে পাঠান, নাহলে এই অসুস্থ লোকটা পুরো দেশকে গোরস্থানে পরিণত করে ছাড়বে। 

     সকল ধরণের কপিরাইটঃ সাইফুল বাতেন টিটো

    মোটাদাগের কথা

    No comments