আঁধার দিনের কথা ।। ছোটগল্প
তখন আমি বেশ ছোট, ফাইভে পড়ি। ১৯৯৩-৯৪ সালের কথা। আমাদের পাশের বাড়িতে একটা দরিদ্র পরিবার ছিল। দরিদ্র বলতে একেবারেই দরিদ্র কিংবা দরিদ্রও নয়, দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করত ওরা। ওরা সব দিক থেকেই গরিব ছিল। নিজেদের জমিজমা বলতে শুধুওই বাড়িটাই ছিল। বাড়িটা ছিল জসীমউদ্দীনের আসমানীদের বাড়ির মতোই। একচালা একটা খড়ের ছাউনির ঘর, মাঝখানে একটা চৌকির মতো। পাটখাঠির বেড়া।
সব দিক থেকে তারা গরিব থাকলেও একটা দিকে ছিল সবার চেয়ে এগিয়ে। তা হচ্ছে ছেলেমেয়ে। ‘মুখ দিয়েছেন যিনি, আহার দিবেন তিনি’ এই স্লোগানে বিশ্বাসী বাড়ির কর্তা হারুন চাচারছয়-ছয়টা সন্তান জন্ম দিয়েছে এখনপর্যন্ত। সবচেয়ে বড় মেয়ে আসমা আর আমার বয়সের পার্থক্য ছিল এক মাস উনিশ দিন। এ কথা মাকে প্রায়ই বলতে শুনেছি। আশ্চর্যের বিষয় এই যে ছেলেমেয়েগুলোর চেহারা-সুরত ছিল খুবই সুন্দর। সবচেয়ে আকর্ষণীয় ছিল ওদের চোখ। আর গায়ের রং? গান-কবিতা-উপন্যাসে বলে-না দুধে আলতা,ওদের গায়ের রং দেখে মনে হতো, এমন রং দেখেই মনে হয় তারা লিখেছে দুধে আলতা গায়ের বরন।
ছেলেমেয়েগুলো অত সুন্দর সুরত পেয়েছে তাদের মায়ের কাছ থেকে। তাদের মা খুবই রূপবতী এক মহিলা। দেখলে সবারই চোখ ধাঁধিয়ে যেত। গায়ের রংটা ছিল এককথায় সোনালি। অমন গায়ের রং মানুষের হয়, আমি আগে দেখিনি। আমরা তাকে ডাকতাম রাঙা চাচি বলে। মাঝারি উচ্চতার রাঙা চাচির স্বাস্থ্য ছিল একটু বাড়ন্ত, আর বুক দেখলে ওই কিশোর বয়সেই আমার বুকের মধ্যে কেমন যেন করত। আমি এত বড় হয়েছি আজ পর্যন্ত এরকম গরিব মানুষের এত রূপ আর কোথাও দেখিনি। গরিবদের যে চেহারা খারাপ হয়, তা বলছি না। সৃষ্টিকর্তা তাদের যত সুন্দর করেই পাঠাক না কেন, অযতœ, অবহেলা আর পুষ্টিহীনতায় তাদের সুন্দর চেহারা আর সুন্দর থাকে না। একসময় নষ্ট হয়ে যায়। কিন্তু কী কারণে জানি না ওদের চেহারা একটুও নষ্ট হতো না, বরং দিন দিন আরও ফুটে বের হতো। আমাদের গ্রামের সুন্দর চেহারার উদাহরণ ছিল এই রাঙা চাচি আর তার ছেলেমেয়েরা। কী রকম বলি: হয়তো কেউ বিয়ে করেছে, মা-চাচিরা সবাই মাত্র বউ দেখে এসে মন্তব্য করতে বসেছে। কেউ একজন বলল, বউ তো খুবই সুন্দর। এক্কেবারে পরির মতন।
কেউ একজন হয়তো বলল, যতই কও, হারুনের বউয়ের ধারেকাছেও না।
কিংবা কারও বাচ্চা হয়েছে। একজন বলল, ছোট্ট মনু তো দেখতে মাসাল্লা ভালাই হইছে। মনে হয় এক্কেবারে ইংরাজের বাচ্চা। সাথে সাথে পাশ থেকে কেউ হয়তো বলে বসল,তয় হারুনের মাইয়া-পোলাগুলার মতো না। এরকম হাজারও উদাহরণ।
রাঙা চাচি আমাদের বাড়িতে প্রায়ই ভাতের মাড় নিতে আসত। মাকে দেখতাম সব সময় একটা পরিষ্কার পাত্রে মাড় গালাত। ওরা ভাতের মাড় ভাতের বিকল্প হিসেবে খেত।
হারুন চাচা ছিল বারোমাইস্যা কাশের রোগী।কাশি বলতে যেই-সেই কাশি না, একেবারে ভয়ানক হাঁপানি।প্রতি বৃহস্পতিবার হারুন চাচাকে ঝাড়ার জন্য আমাদের এলাকার বিশিষ্ট ওঝা লেহাজ শরিফ আসত। সে এক বিশাল ডাকসাইটে ওঝা। তার কীর্তিকলাপ আমরা শুনতাম কিংবদন্তি হিসেবে। শুনেছি ডাক্তার যে রোগীকে মৃত বলে বাড়ি পাঠিয়েছে, এমন রোগীও লেহাজ শরিফের এক ঝাড়ায় উঠে বসে বলেছে, হাঁসের গোশত দিয়া ভাত খামু। তবে তার এমন মোজেজা কখনোচোখে দেখার সৌভাগ্য হয়নি।
আমরা ছোটরা সব সময় সেই ঝাড়ফুঁক দেখতাম চারপাশে গোল হয়ে দাঁড়িয়ে। লেহাজ শরিফ দেখতে ছোটখাটো একজন মানুষ। থুতনির গোড়ায় এক গোছা দাঁড়ি, মাথায় পাগড়ি, চোখে সুরমা আর গায়ে কড়া আতর দিয়ে আসত সে। প্রতিবৃহস্পতিবার সে রোজা রাখত। রোজা মুখে ঝাড়ফুঁক করলে নাকি বেশি কাজ হয়। বৃহস্পতিবার যে লেহাজ শরিফ শুধু হারুন চাচাকেই ঝাড়ফুঁক করত, এমন নয়। সে এসে বসত আমাদের পাশের বাড়ির হাকিম চাচার উঠানে। অধিক জমির মালিক থাকার কারণে হাকিম চাচা এমনিতেই একটু মোড়ল স্বভাবের ছিলেন।
গাঁয়ের মানুষ নানা সমস্যা আর উপঢৌকন নিয়ে আসত। কারও বাচ্চা বিছানায় প্রস্রাব করে, কারও বাচ্চার দাঁত উঠতে দেরি হচ্ছে, কারও হাঁপানি, কারও পেট খারাপÑসব রোগের স্পেশালিস্ট ছিল এই লেহাজ শরিফ। একেবারে ঘামাচি থেকে ক্যানসার পর্যন্ত সব রোগীর চিকিৎসাই সে করত। কোনো রোগী যদি কোনো কারণে সুস্থ হয়ে যেত, তবে তার ক্রেডিট পেত লেহাজ শরিফ আর সুস্থ না হলে সবাই বলত,আল্লাহ তার বান্দারে আরও কষ্ট দিয়া পরীক্ষা করতেছে। কিন্তু লেহাজ শরিফই ছিলসবার সব রোগের একমাত্র চিকিৎসক। দশগ্রামের ভরসা। বৃহস্পতিবার সকাল দশটা-এগারোটার দিকে সে আসত খালি হাতে। সারাদিন ঝাড়ফুঁক করে সন্ধ্যায় রাজকীয় ইফতার আর রাতে ভূরিভোজ শেষে সারাদিনের আয়-রোজগার কম করে হলেও দুইটা বড় ঝুড়িতে করে নিয়ে কারও সহায়তায় বাড়ি ফিরত।
হারুন চাচা আর রাঙা চাচি দুজনেই আমাদের বাড়িতে মাঝেমাধ্যে টুকটাক কাজবাজ করত। কোনো কোনো দিন বড় মেয়ে আসমাকেও নিয়ে আসত সাথে করে। আসমার ডাকনাম ছিল বুড়ি। সে নাকি ছোটবেলা থেকেই বুড়া বুড়া কথা বলত। সবাই আদর করে বুড়ি ডাকতে ডাকতে বুড়ি ওর ডাকনামে পরিণত হয়েছে। আর তা নিয়ে ওর কোনো আক্ষেপ আছে বলে মনে হয়নি কোনো দিন।
হারুন চাচা আর রাঙা চাচি দুজনেই আমাদের বাড়িতে মাঝেমাধ্যে টুকটাক কাজবাজ করত। কোনো কোনো দিন বড় মেয়ে আসমাকেও নিয়ে আসত সাথে করে। আসমার ডাকনাম ছিল বুড়ি। সে নাকি ছোটবেলা থেকেই বুড়া বুড়া কথা বলত। সবাই আদর করে বুড়ি ডাকতে ডাকতে বুড়ি ওর ডাকনামে পরিণত হয়েছে। আর তা নিয়ে ওর কোনো আক্ষেপ আছে বলে মনে হয়নি কোনো দিন।
বুড়াবুড়া কথা বললেও ওকে আমার বেশ ভালো লাগত। দেখলে মনে হতো সিনেমার ছোট নায়িকা। ওর মাথার চুল থেকে পায়ের নখ পর্যন্ত সবকিছুই দেখতে অনেক সুন্দর ছিল। কেন জানি না ওর দিকে তাকিয়ে থাকলেই ভালো লাগত। ওকে আমি একটু কিছু হলেই চিমটি কাটতাম। জবাবে বুড়িও আমাকে চিমটি কাটত।তবে ও যখন চিমটি কাটত, তখন খুব সুন্দর করে একটা হাসি দিত, যার আশাতেই ওকে চিমটি কাটতাম। যেদিন শুধুু আমিই চিমটি কাটতাম, ও কাটত না, সেদিন আমার ভীষণ খারাপ লাগত। মাঝেমধ্যে ওর সাথে আমি খেলতাম। তবে সব সময় নয়। ও আর আমি আবার এক স্কুলেই একই ক্লাসে পড়তাম। ও যেদিন স্কুলে যেতনা, সেদিন বিকেলবেলা আমাদের বাড়ি আসত পড়া জানতে।
আমাদের বাড়ি থেকে স্কুল ছিল দেড়-দুই কিলোমিটার দূরে। প্রায় সময়ই আমরা একত্রে স্কুলে যেতাম। স্কুলে যাওয়ার পথে একটা জায়গার ছিল নাম গলাকাটা জঙ্গল। জায়গাটা আমাদের বাড়ি থেকে আধামাইলের মতো দূরে।দিনের বেলায়ও বেশ অন্ধকার থাকত।আমরা ছোটবেলা থেকেই গলাকাটা জঙ্গল সম্পর্কে এত এত ভয়ংকর কথা শুনেছি যে ও জঙ্গল নিয়ে কথা বলতেও ভয় হতো। দিনের বেলায়ও ছোট-বড় কেউ ওই জঙ্গললের পাশের রাস্তা ধরে একা হাঁটত না। শোনা যায়, ১৯৭১ সালে প্রায়ইওই জঙ্গলের ধারের খালে অনেক গলাকাটা লাশপাওয়া যেত। তার পর থেকে জঙ্গলের নাম হয়ে যায় গলাকাটা জঙ্গল। নানা রকম ঘটনায় বিখ্যাত এই গলাকাটা জঙ্গল। একসময় অল্প বয়সী মেয়েদের বিবস্ত্র-বিকৃত লাশ পাওয়া গেল।
সেই গলাকাটা জঙ্গলের কাছাকাছি গিয়ে আমি ওর বই আমার স্কুলব্যাগে ভরে নিতাম। পালা করে এক দিন ও ব্যাগ নিত, একদিন আমি।ওই রাস্তাটা পার হওয়ার সময় ও শক্ত করে আমার জামা খামচে ধরত। আমার যে কী ভালো লাগত, তা বলে বোঝানো মুশকিল। ক্লাস ফোর-ফাইভে পড়া একজোড়া ছেলেমেয়ে কতটুকুই-বা বোঝে? কিন্তু আমরা বুঝতাম। কারণ, আমরা একটু বেশি বয়সেই লেখাপড়া শুরু করেছি। আমি যখন ফাইভে পড়ি, তখন আমার বয়স বারো-তেরো বছর। আমি বুঝতাম যে আমি বড় হতে শুরু করেছি।
ক্লাস ফাইভের ফাইনাল পরীক্ষা এসে গেছে। এক বিকেলে আমি নিজের উদ্যোগেই পড়ছি। বিকেলবেলা মা বাড়িতে থাকে না। এবাড়ি-ওবাড়ি বেড়াতে যায়। আর সাধারণত মা কাছে না থাকলে আমি পড়াশোনার ধার ধারিনা। কিন্তু এখন পড়ছি। কারণ, সামনে ফাইনাল পরীক্ষা। এর কিছুদিন পরই আবার বৃত্তি পরীক্ষা। ছোট মামা কথা দিয়েছে, ফার্স্ট হতে পারলে ঢাকায় নিয়ে যাবে। ঢাকায় কী একটা বেশ ভালো স্কুল আছে, সেখানে পড়াবে। বাবা বলেছে, বৃত্তি পেলে সাইকেল দেবে। তাই মায়ের অনুপস্থিতিতেও বেশ পড়ছি। আসর শেষ হয়েছে, তা-ও আধা ঘণ্টা। শীতকাল। চারদিকে কুয়াশা পড়া শুরু করেছে। এমন সময় আসমা এল। আজ ও স্কুলে যায়নি।তাই পড়া জানতে এসেছে। আমি বাইরে পড়ন্ত রোদের উষ্ণতায় পড়ছিলাম। আসমাসহ ঘরের মধ্যে চলে গেলাম। আসমা আর আমি পাশাপাশি বসে আছি। আসমা বই বের করে পড়া জেনে নিচ্ছে। আমি ঝুঁকে ওর আরও কাছাকাছি হলাম। হঠাৎ আমার শরীরের মধ্যে কেমন যেন শিহরণ হলো। ইচ্ছা হলো আমি ওর আরও কাছে যাই। ওর শরীরের গন্ধ নিই। আমি আরও কাছে গেলাম। বেশ ভালো লাগল। হঠাৎ আমি কিছু না ভেবেই আসমাকে জড়িয়ে ধরলাম। আমার বেশ ভালো লাগল। ও আচমকা ঘন ঘন নিশ্বাস ছাড়তে লাগল। এদিক-ওদিক তাকাতে লাগল। আমার মনে হলো, ও ব্যথা পাচ্ছে। আমি ওকে ছেড়ে দিয়ে বললাম,বুড়ি, বড় হইয়া আমি তরে বিয়া করুম। আসমা শিশুর মতো ঘাড় কাত করে সম্মতি জানাল। আমি অবাক হয়ে গেলাম। তবে বেশ খুশি হলাম। এরপর ও বইখাতা গুছিয়ে চলে গেল। আমি বেশ ভয় পেলাম। কেন পেলাম, বুঝিনি। প্রকৃতি মনে হয় সৃষ্টির শুরু থেকেএই সব ব্যাপারে মানুষের মধ্যে ভয় ঢুকিয়ে দিয়েছে। আসমা যাওয়ার সময় বলে গেল, তুই এহনও বড় হসনাই। বলেই ফিক করে হেসে ফেলল। আমি কিছুই বুঝতে পারলাম না।
পরের দিনও আসমা আর স্কুলে গেল না। আমি বিকেলবেলা বসে রইলাম ও পড়া জানতে আসবে, এই আশায়। কিন্তু আর এল না। আমার বেশ মন খারাপ হলো। তবে আমার ভয়ও হলো। ও যদি আবার রাঙা চাচিকে সব বলে দেয়? তাহলে রাঙা চাচি আবার বলে দেবে মাকে। এরপর কয়েকদিন আমি রাঙা চাচির সামনে পড়লাম না। কিন্তু আসমাকে দেখার জন্য মন কেমন জানি করতে লাগল।
একদিন দুপুরে খাওয়ার সময় মা বাবাকে বলল, আপনে একটু ভাত খাইয়া বুড়িগো বাড়িতে যাইয়েন। হারুনের অবস্থা তো বেজায় খারাপ। বাবা বলল, ক্যান, কী হইছে?
আইজ পাঁচ দিন ধইরা বিছানা ছাইড়া উঠতে পারতাছে না। হাঁপানি তো আগে থাইকাই ছিল, এহন নাকি কাশির লগে রক্ত পড়ে। আপনে ভাত খাইয়া একবার যান।
আমি যাইয়া কী করুম? লেহাজ শরিফরে আইনা ঝাড়াইতে কও, বাবা একটু রাগ নিয়ে বলল। আমার বাবা আবার গ্রাম্য ডাক্তার। সে এইসব ঝাড়ফুঁক দুই চোখে দেখতে পারেনা। দেখতে পারেনা ওঝা লেহাজ শরিফকেও। বাবা সবাইকে অনেক বুঝিয়েছে। কিন্তু গ্রামাঞ্চলের মানুষের কিছু গোঁয়ার্তুমি আছে, যা আমাদের দেশকে এখনো অনেক পিছিয়ে রেখেছে। কোনো শিক্ষিত মানুষ যদি কোনো সুপরামর্শ দেয়, গ্রামের মানুষ তা কুপরামর্শ মনে করে। ভাবে, এই শিক্ষিত মানুষ আসলে আমার ক্ষতি করে সবকিছু হাতিয়ে নিতে চাচ্ছে। ফলে এই ওঝা-ফকিরির বিরোধিতা করায় গ্রামে বাবার একটা বিরোধী পক্ষও রয়েছে। তার মধ্যে স্বঘোষিত মোড়ল হাকিম চাচাও একজন।
আমার বাবা পাস করা পল্লি চিকিৎক। আমাদের অঞ্চলে সপ্তাহে একেক এলাকায় একেক দিন বাজার বসে। বাবা প্রতিটি বাজারের বড় বড় ফার্মেসিতে বসে রোগী দেখে। একেক রোগীর ভিজিট দশ টাকা। ছোটখাটো ফোড়াটোরা কাটে, পায়ের কাটা ওঠায়, কেউ মারামারি করে মাথা ফাটালে বাবা সেলাইও করতে পারে। সব মিলিয়ে বাবা পসার ভালো, আয়-রোজগার খারাপ না। ফজলু ডাক্তার বললে একনামে অনেকেই চেনে বাবাকে।
বাবা যখন যাচ্ছিল, তখন আমি মাকে বললাম, মা, আমিও যামুবুড়িগো বাড়ি।
তুই কিল্লাইগা যাবি? তুই পড়তে বয়, পরশু পরীক্ষা। মায়ের গরম চোখ দেখে আমার বুড়িকে দেখার সাধ মিটে গেল। হারুন চাচা সেই যে বিছানায় শুইল, কবরে যাওয়ার জন্য একবার উঠেছিল আর বোধ হয় উঠতে পারেনি। দিন দিন অবস্থা বেশ খারাপ হতে শুরু করল। আমি আসমাদের বাড়িতে শেষ পর্যন্ত যেতে পেরেছিলাম। মাঝেমধ্যে হারুন চাচার অসুখ দেখতে যেতাম। রাঙা চাচি হারুন চাচার পাশে সারা দিন বসে থাকত। শেষ দিকে হারুন চাচার এমন অবস্থা হলো যে পেশাব-পায়খানা সবই বিছানায় করতে শুরু করল। সন্ধ্যার পর একদিন মায়ের সাথে গিয়েছিলাম। গিয়ে দেখি আসমাসহ ওরা ছয় ভাইবোন গোল হয়ে বসে আছে। আর হারুন চাচা সমানে কেশে যাচ্ছে। রাঙা চাচি কতক্ষণ পরপর রসুন আর সরিষার তেল গরম করে হারুন চাচার বুকে মালিশ করে দিচ্ছে। আমি জানি, সবাই না খেয়ে আছে। মা কিছু খাবার নিয়ে এসেছে। সবাই সেই খাবারের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ল। আসমা আমার সাথে কোনো কথা বলেনি।
আমি ফার্স্ট হয়ে সিক্সে উঠেছি। বাবা আমাকে নতুন সাইকেল কিনে দিয়েছে। আসমাও সিক্সে উঠেছে। ওনিয়মিত স্কুলে যেতে পারে না। আমার কাছে মাঝেমধ্যে পড়া জানতে আসে। কেন জানি না আসমা এলে মা এখন কোনো না কোনো ছুতায় আমাদের পাশে দাঁড়িয়ে থাকে। তারপরও আমাদের চিমটি বিনিময় হয়, চোখের ইশারায় কথা হয় সবার অগোচরে।
একদিন আমার কাছ থেকে বাংলা দ্বিতীয় পত্র বইটা নিয়ে গেল আসমা। যেদিন ফেরত দিয়ে গেল, সেদিন আমি বইয়ের মধ্যে হাতের লেখার খাতায় এক লাইনের একটা চিঠি পেলাম।
ঢাকায় গেলে আমাকে ভুলে যেয়ো না।
আমার বাবা গ্রাম্য ডাক্তার বলেই হয়তো তার ছেলেকে ডাক্তার বানানোর এত ইচ্ছা। আমার মামা ঢাকায় থাকে। কী এক বড় সরকারি চাকরি করে। কথা ছিল ফাইভের ফাইনাল পরীক্ষার পরই আমাকে ঢাকায় নিয়ে যাবে। কিন্তু কোনো এক সমস্যার কারণে হয়নি। মামা আসবে, আমাকে নিয়ে ঢাকায় যাবে, আমি বড় স্কুলে পড়ব, এ এক অন্যরকম আনন্দ! আমি আমার সে আনন্দের আগাম খবর দুয়েকবার আসমাকে বলেছি। তাই ও আমাকে এই এক লাইনের চিঠি লিখেছে। আমার যে কী আনন্দ হলো বলে বোঝাতে পারব না।
রাঙা চাচির সেই আগের রূপ অনেকটাই ম্লান হয়ে গেছে। চোখের নিচে কালো হয়ে গেছে। চোখ কোটরে ঢুকে গেছে। নিশ্চই ঘুমাতে পারে না। সেদিন মাড় নিতে এসে মাকে বলেছিল,ভাবি, রাইতে একটুও চোখ বুজতে পারি না। সারা রাইত ধইরা খালি কাশে। মাইয়া-পোলাগুলা না খাইতে পাইরা খালি ট্যাও ট্যাও করে। কী যে করুম, বিষ খাইয়া মইরা যামু নাকি!
কী সব আবলতাবল কতা কও। তুমি মইরা গেলে অগো দ্যাখবো কেডা?
আমি বুঝতে পারি ওদের খুব কষ্ট হয়। কিন্তু আমি কী করব? আসমাকে দেখলে বড় মায়া লাগে। রাঙা চাচি যে কাজকর্ম কিছু একটা করবে, তারও সুযোগ নেই। দিনরাত হারুন চাচার পাশে পড়ে থাকে। প্রায়ই সবাই মিলে না খেয়ে থাকে। হারুন চাচা দিন দিন শুকিয়ে কাঠ হয়ে যাচ্ছে। যখন কাশি শুরু হয়, তখন পাঁজরের হাড় সব কটা গোনা যায়। চিকিৎসা বলতে ওই লেহাজ শরিফের ঝাড়ফুঁক আর মাঝেমধ্যে বাবা গিয়ে একটু-আধটু ওষুধ দিয়ে আসে।
বছরের মাঝামাঝি ছোট মামা ঢাকা থেকে এল। আমাকে ঢাকায় নিয়ে যাবে। আমি এখন ঢাকায় গিয়ে কোচিং করব ডিসেম্বরে ক্লাস সেভেনে ঢাকার ভালো স্কুলে ভর্তির জন্য। আমার বেশ আনন্দ লাগার কথা। কিন্তু কেন জানি আনন্দ লাগছে না। আমি যেদিন ঢাকায় যাব, তার আগের দিন হারুন চাচা মারা গেল। আমার আর ঢাকায় যাওয়া হলো না। আমি ভীষণ কষ্ট পেলাম। কিন্তু কষ্ট পেলে কীই-বা করার আছে? রাঙা চাচি আছাড় খেয়ে কাঁদছে। রাঙা চাচির জন্যও আমার বেশ কষ্ট হচ্ছে। আসমা সকালের দিকে বেশ কেঁদেছিল। এখন আর কাঁদছে না। গোমড়া মুখ করে বসে আছে। আমি সবার আড়ালে একবার আসমার কাছে গেলাম। আমাকে দেখেই হাউমাউ করে কেঁদে দিল। কেন জানিনা আমিও কেঁদে ফেললাম।
আল্লাহ তো সবই বোঝে। বুঝেও মানুষকে কেন এত কষ্ট দেয়? কি জানি, আমি ছোট মানুষ, আমি অত বুঝিনা। ইসলাম ধর্ম স্যার বলেছেন, আল্লাহরে নিয়া অত প্রশ্ন করবানা। আমাকে একদিন বেশ মেরেছেও প্রশ্ন করার জন্য। ঘটনাটা ছিল এ রকম- স্যার বলছেন, এক ওয়াক্ত নামাজ না পড়লে দুই কোটিআটাশি লক্ষ বছর আল্লায় আগুনে পোড়াইব।
আমি দাঁড়িয়ে বললাম, স্যার, আপনে তো কইলেন আল্লাহ রহমানুর রহিম। দয়ার সাগর। তাইলে হে এক ওয়াক্ত নামাজের লাইগা তার বান্দারে অত কষ্ট দিব ক্যান? কেউ এক ওয়াক্ত নামাজ না পড়লে আল্লাহর ক্ষতি কী?
সেদিন স্যার বেশ মেরেছিল ঠিকই কিন্তু আমার প্রশ্নের সদুত্তর দিতে পারেনি। তবে প্রশ্নটা আজও আমার মনে রয়ে গেছে।
আমি ঢাকায় চলে গেলাম।পেছনে পড়ে রইল আমার মা, বাবা, আমার প্রিয়তমা বুড়ি। মামা-মামির কঠোর তত্ত্বাবধানে আমার পড়াশোনা শুরু হলো। আমি যে স্কুলে ভর্তি হওয়ার জন্য পড়াশোনা করছি, মামি নাকি সেই স্কুলেরই টিচার। কোনো কোচিংয়ে আর ভর্তি হলাম না। প্রথম প্রথম ঢাকায় মন টিকত না। আমার একমাত্র মামাতো বোন আমার চেয়ে দুবছরের ছোট। আমার সাথে ভালো করে কথাই বলে না। অনেক কষ্ট হলো নিজেকে খাপখাইয়ে নিতে। ভর্তি হলাম ঢাকা আইডিয়াল স্কুলে। সবকিছু বেশ কড়াকড়ি। গ্রামের স্কুলের মতো নয়। নিজের স্বাধীনতা বলতে এখানে কিছু নেই। সব ছেলে কেমন অন্য রকম! আমি সবার কথাও ঠিকভাবে বুঝি না। এমনকি আমার সব কথাও সবাই বোঝে না। ক্লাসে সবাই বরিশাইল্যা খ্যাঁতার গাট্টি বলে ডাকে।
দিন শেষে আমার মনটা পড়ে থাকে আমার গাঁয়ে, আমার কিশোরী প্রিয়তমা কাছে। আসমার কথা সারা দিন ভুলতেই পারি না। কিন্তু সে কথা আমি কাকে কীভাবে বলব? একদিন ভাবলাম ওকে একটা চিঠি লিখি। কিন্তু কীভাবে চিঠি ওর কাছে যাবে? আচ্ছা, ওর জন্য আমার মনটা যেমন করে, আমর জন্যও কি ওর মনটা এমন করে? খালি বাড়ি যেতে মন চাইছে। মামাকে বললে মামা বলে,দেরি আছে, দেরি আছে। সাইকেলটাও পড়ে আছে বাড়ির কোনো এক অন্ধ কুঠরিতে। বাড়িতে গেলে এবার আসমাকে পেছনে নিয়ে চালাব।
অবশেষে দীর্ঘদিন পর ঈদের ছুটিতে মামা-মামির সাথে আমার বাড়ি আসার সুযোগ হলো।
আমি যথেষ্ট খুশি হয়ে বাড়িতে এলাম। বেশ আনন্দ লাগছে। মনে হচ্ছে কত যুগ পর বাড়িএলাম! এতদিন কেউ আমাকে খাঁচায় আটকে রেখেছিল। আজ মুক্তি হলো। আজ যে আমি আসব, তা আসমা নিশ্চয়ই মায়ের কাছে শুনেছে। ও কি আসবে না আমাকে দেখতে? আমাকে চিমটি কাটতে? ও কি জানে যে টিফিনের টাকা বাঁচিয়ে ওর জন্য আমি কী কী কিনেছি? রিকশা থেকে নেমে বাড়িতে ঢোকার পথে হঠাৎ আমি থমকে দাঁড়ালাম। হারুন চাচার কবরের দিকে তাকিয়ে আমি চমকে উঠলাম। সেখানে আরেকটি নতুন কবর। কে মারা গেল নতুন করে? আমি ঢাকায় গিয়েছি পাঁচ-ছয় মাসের মতো হবে। এর মধ্যে কে মারা গেল? আর মা-ও তো চিঠিতে কিছু লিখলনা। কে হতে পারে? আমি বাড়িতে চলে এলাম।
মা আমাকে জড়িয়ে ধরে বেশ কিছু সময় কাঁদলেন। সাথে আমিও। ঢাকায় মামার বাসায় কত রাত ঘুমাতে পারিনি। খালি মায়ের কথা মনে পড়ত, আসমার কথা মনে পড়ত।
দুপুর গড়িয়ে বিকেল হলো, বিকেল গিয়ে সন্ধ্যা। আমার প্রিয়তমার কোনো দেখা নেই। ভাবলাম, একবার যাব ওদের বাড়িতে। কিন্তু তার আর দরকার হলো না। সন্ধ্যার কিছু পর আমি জানতে পারলাম আমার বুড়ির খবর, আমার প্রিয়তমার খবর। যে খবর জানার চেয়ে না জানাই বোধ হয় ভালো ছিল। হারুন চাচার কবরের পাশে নতুন কবরটা আসমার। আমার বুড়ির। যে আমাকে ভালোবাসত আর আমি এখনো ভালোবাসি।
আসমা মারা যাওয়ার ব্যাপারে গ্রামে দুই ধরনের কথা প্রচলিত আছে। প্রথম কথাটা এরকম: এক গভীর রাতে নিশির ডাক পায় আসমা। প্রচলিত আছে, নিশির ডাক যাকে ডাকা হয়, সে ছাড়া অন্য কেউ শুনতে পারে না। সে রাতে ডাক পেয়ে কাউকে কিছু না বলে ঘর থেকে বের হয়ে যায়। সেই ডাক কাল হয় ওর। পরের দিন সারা দিনে কোথাও খুঁজে পাওয়া যায়নি। সন্ধ্যায় লাশ মেলে গলাকাটা জঙ্গলে। পুলিশ এসে লাশ নিয়ে যায়। কাটাছেঁড়া করে দুদিন পর পুলিশ এসে লাশ দাফন করে দিয়ে যায়। কেউ কারও নামে কোনো অভিযোগ করেনি। পুলিশ বাদী হয়ে একটি অপমৃত্যু মামলা রজু করে মাত্র।
নাসির নামে আসমার এক দূরসম্পর্কের চাচাতো ভাই আছে। হারুন চাচা মারা যাওয়ার পর নাসির এসে ঠাঁই নেয় আসমাদের বাড়িতে। কেউ কেউ বলে,আসমার সাথে সেই নাসিরের প্রেমের সম্পর্ক তৈরি হয়েছিল, তা থেকে শারীরিক। একসময় আসমার পেটে বাচ্চা এসে যায়। যার জন্য আসমা আত্মহত্যা করেছে। আবার কেউ কেউ বলে, নাসিরের সাথে আসমার নয়, রাঙা চাচির প্রেম এবং শারীরিক সম্পর্ক হয়, যা আসমা জেনে ফেলেছিল। এই জন্য নাসির ও রাঙা চাচি দুজনে মিলে আসমাকে খুন করে গলাকাটা জঙ্গলে ফেলে রেখে আসে। শেষ কথাটা সত্যি হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। কারণ, আসমা মারা যাওয়ার কয়েক দিন পর নাসির রাঙা চাচিকে নিয়ে পালিয়ে যায়। শোনা যায়, তারা এখন ঢাকায় একটি গার্মেন্টসে চাকরি করে সুখে-শান্তিতে আছে। আর এদিকে তার ছোট ছোট সন্তানেরা রাস্তায় রাস্তায় ভিক্ষা করছে। দোরে দোরে মানুষের লাথি-গুঁতা খাচ্ছে।
আমার ঢাকায় ফিরে যাওয়ার দিন চলে এল। আসমার জন্য মাঝেমধ্যে বুকের মধ্যে কেমন মোচড় দিয়ে ওঠে। কারা মেরেছে ওকে? কীভাবে মেরেছে? মরার সময় ও কি খুব কষ্ট পেয়েছে? আচ্ছা, ওর কি আমার কথা মনে পড়েনি একবারও? সবার চোখের আড়ালে মাঝেমধ্যে কাঁদি।
লঞ্চঘাটে যাওয়ার জন্য আমি রিকশায় উঠে বসেছি। নীল পলিথিনে ঢাকা আসমার কবরটা দেখা যাচ্ছে। আমি ক্রমাগত চোখ মুচছি। মামা বলল, কি, মাকে ছেড়ে যেতে ইচ্ছে করছে না? আমি কোনো জবাব দিলাম না। আমার ভীষণ কান্না পাচ্ছে। আসমা কেমন আছে? ও কি বেহেশত পেয়েছে, না দোজখ। ওর দোজখ পাওয়ার কথা নয়। ও নিশ্চয়ই বেহেশত পেয়েছে।
এক যুগ পরের কথা...
আজ আমি একজন এমবিবিএস ডাক্তার। বিসিএস দিয়ে সদ্য নিজের থানায় পোস্টিং পেয়েছি। বারো বছর আগে আসমা কী কারণে মারা গিয়েছিল, তা খোঁজার জন্যদ্বারস্থ হলাম আমাদের সাথে বিসিএস পাস করা পুলিশের অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনার মুহিনের। আমি ওকে সব খুলে বললাম। ও আমার কাছে সময় চেয়ে নিল। বলল, যদি ওর পোস্টমর্টেম হয়ে থাকে, তবে অবশ্যই রিপোর্ট দেখানো যাবে।
দিন পনেরো পর মুহিন আমাকে ফোন করে থানায় যেতে বলল। দেখলাম, আসমার পোস্টমর্টেম রিপোর্ট। আসমাকে রেপ করা হয়নি। প্রথমে গলায় রশি পেঁচিয়ে হত্যা করা হয়েছে। তারপর মুখে বিষ ঢেলে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সে বিষ পাকস্থলীতে পৌঁছায়নি। আমি জানতে চাইলাম, আচ্ছা, ও কি প্রেগন্যান্ট ছিল?
আরে নাহ্!
আসমার মৃত্যুর পর ওর যারা স্বজন ছিল, যারা ওর খুনের জন্য মামলা করতে পারত, তারা ছিল ওর মা আর ওর দূরসম্পর্কের চাচাতো ভাই নাসির। কিন্তু আমার ধারণা, এই দুজনই ওর খুনি। তারা কেন কেস করতে যাবে?
আমি মুহিনকে বললাম, আচ্ছা, এই কেসটি এখন নতুন করে করা যাবে না?
অবশ্যই করা যাবে, কেন করা যাবে না? কিন্তু কে করবে কেস? এমন হাজারও খুন আছে, যার কোনো কেসই ফাইল হয় না। এটাও তেমন একটা কেস। কে কেস লড়বে, বলো?
আমি। আমি কেস লড়ব।
সেদিন আমি আসমার মা, অর্থাৎ রাঙা চাচি আর নাসিরকে আসামি করে কেস ফাইল করে তবেই হাসপাতালে ফিরলাম।আমার কষ্ট হয় হবে। আমি এই কেসের শেষ দেখতে চাই। এমন চলতে পারে না। খুন করে করে ভূত-প্রেতের নামে চলিয়ে দেওয়া আর কত দিন? এ আঁধার দিনের অবসান হওয়া উচিত। মানুষ চাঁদে গেছে সেই ১৯৬৯ সালে। এখনো কেন একজন ওঝা সব রোগের চিকিৎসা করে বেড়াবে? কেন একটা জঙ্গলকে ঘিরে ইবলিশের দায় দিয়ে কিছু জানোয়ার খুন-রেপ করে বেড়াবে? আমি হাসপাতালে ফিরে একটা এ-ফোর সাইজের কাগজ বের করে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডে দরখাস্ত লিখতে বসলাম। আগে বিদ্যুৎ আসুক। দূর হোক আঁধার সবার আগে।
সকল ধরণের কপিরাইটঃ সাইফুল বাতেন টিটো
(গল্পটি আমার প্রথম ছোটগল্প সংকলন ‘ক্লিনিক্যাল লায়ার’-এ প্রকাশিত। বইটি অমর একুশে বইমেলা ২০১৮ তে ঐতিহ্য প্রকাশনি থেকে প্রকাশিত হয়েছে)
No comments