Header Ads

CODESMITE
  • সাম্প্রতিক লেখা:

    মামা দ্রুত বীর্যপাত কি? ।। কলামঃ মোটাদাগের কথা

    অনুরোধে আমাদের প্রায়ই ঢেঁকি কেন আস্ত রাইস মিলও গিলতে হয়। আমিও এর ব্যাতিক্রম নই। প্রায় বছর দেড়েক আগের কথা। আমার গ্রামের বাড়ী থেকে আমার চাচাতো বোন তার ছোট মেয়ে আর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালে ভর্তিচ্ছু ননদ নিয়ে ঢাকায় বড় চাচার বাসায় এসেছে। 

    এক শুক্রবার আমার বাসায় দাওয়াত গ্রহন করতে এলো। আপার ছোট মেয়ে অর্পা যেমন দেখতে কিউট তেমনি ছটফটে আর মুখরা। বয়স সাড়ে চার হলেও বাবা মা দুজন শিক্ষক হওয়ায় সে এখুনি সব দেখে বানান করে পড়তে পারে। বাংলা তো খুব দ্রুত পারে আর ইংলিশও মোটামুটি পারে, আর না পারলে পাশে থাকা বয়সে বড় কাউকে জিজ্ঞেস করে। আর এ জন্য কাজের বুয়া সল্প শিক্ষিত বড় আত্মিয় স্বজনেরা প্রায়ই বিব্রত হয়। 




    তেমনি একদিন আমাকে এই কিউট সুইট বেবিটা কোন লেভেলের বিব্রতকর অবস্থায় ফেলে দিয়েছিলো সে গল্পই আজ বলব। যেদিনের কথা বলছিলাম। শুক্রবার আমি আমার পুরো পরিবার সহ বজারে গিয়ে সবার পছন্দ মতো বাজার করে নিয়ে এসে সবাই মিলে রান্না করলাম। আমার স্ত্রী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে একাই থাকে। সেও সবাইকে পেয়ে বেশ মেতে উঠলো। খাওয়ার সময় ঘোষণা দিলো আজ সবাইকে সে সিনেমা দেখাবে। কিন্তু দিন শেষে আমার পকেট ফাঁকা হবেই আর সবাইকে নিয়ে গিয়ে আবার নিয়ে আসার দায়িত্বটাও কোন না কোন ভাবে আমাকেই পালন করতে হবে। 


    যাই হোক রাইস মিল গিলতেই হলো। দুপুরে খেতে খেতে আমাদের সাড়ে তিনটা বেজে গেলো। ঠিক হলো আমরা বলাকায় সাড়ে পাঁচটা বা ছয়টার সো দেখব, সেখানে ভালো সিনেমা না চললে বসুন্ধরায় যাব। আমি বাদে যেহেতু দলের সবাই মেয়ে তাই বের হতেই আমাদের পাঁচটা বেজে গেলো। কিভাবে যাব সেটা আমরা ঠিক না করেই বেরিয়ে পড়লাম। কল্যানপুর বাস স্টান্ডে এসে রিক্সা সিএনজি কিছুই না পেয়ে আমরা বাসে যাব ঠিক করলাম। 


    আমরা ঐ লাইনের সুপার লোকালের চেয়ে একটু কম লোকাল সাইজে বড় বাসে উঠলাম। বাসে নামটা নাই বলি। শুক্রবার বাসে তেমন যাত্রী নেই। বাসটির এক পাশে দুই সিট এক পাশে তিন সিট। আমরা একেবারে সামনের দিকে বসলাম। অর্পা আর আমি বসলাম এক রো তে আর আমার স্ত্রী, আপার সুন্দরী ননদ আর আপা বসল পাশের তিন সিটের রোতে। 


    অর্পা পটর পটর করেই চলছে। কয়টা আইচক্রিম খাবে, বাবা কেন আচার খেতে দেয়না, দোয়েলের (ওর কাজিন) যেমন একটা ট্রেন আছে ওর তেমন ট্রেন চাই। আর কতক্ষকন পর পর ওর মা বলছে অর্পা থামবি! অর্পা থামবি!!! কে শোনে কার কথা? বাসের অন্য যাত্রীদের কেউ কেউ তার সাথে কথা বলছে। খেয়াল করলাম বাসের সামনের দিকের যাত্রীদের অনেকেই অর্পার দুষ্টামি, কথাবার্তা, পাকামি এসব এনজয় করছে। ছেলে বুড় সবার রেসপন্স পেয়ে অর্পাও বেশ মেতেছে। কখনও কখনও বাসে লাগানো স্টিকার বানান করে পড়ছে। না পারলে আমার বৌ আর বেয়াইনের সাথে টাংকি রত যুবকেরা হেল্প করছে। 


    আমার মাথায় আগামী কালের শ্যুটিং নিয়ে ভাবনা। আমি পুরো বিষয়টি ততটা এনজয় করতে পারছি না। কাল নাটকে একটা বড় ইভেন্টের শ্যুটিং অাছে। এফডিসির মিজানকে একটা ফোন করতে হবে। ভাবছি নেমে করব না এই ক্যাওয়াজের মধ্যে করব। কয়েকটি বিষয় ক্যানসেল করতে হবে আর কয়েকটি বিষয় কনফার্ম করতে হবে। 


    হঠাৎ অর্পার ডাকে আমি স্বম্বিৎ ফিরে পেলাম। তার পর সে যে প্রশ্ন করল তাতে বাসে খুবই বিব্রত কর একটা অবস্থা তৈরি হলো। অামার সাড়ে চার বছরের ভাগ্নী আমার কাছে জানতে চাইলো "মামা দ্রুত বীর্যপাত কি?" এমন পরিস্থিতিতে আমি জীবনে পরিনি। বাসের মধ্যে খুব দ্রুত পরিস্থিতি বদলে গেলো। আপা আমার কাছ থেকে অর্পাকে টেনে নিয়ে তার দুই গালে কষিয়ে থাপ্পর বসালেন। মাথার উপরে লাল ফুল বসানো ঝুঁটি টেনে দিলেন। অর্পা তাস্বরে চিৎকার জুড়ে দিলো। পাশে সিটের রোমিও জুলিয়েটেরা আগে তো মজা নিচ্ছিলোই এখন তাদের মজা নেয়ার পরিমান কয়েক গুন বেড়ে গেলো। তারা হো হো করে হাসছে অার অর্পা অর্পার মা দুজনেই চিৎকার করছে। এক ছোকড়ার সাথে বেশ লেগে গেলো আপার। আপা বলেছে আপনি দাঁত কেলিয়ে হাসছেন কেন আর সে বলেছে অপনি অসভ্যের মতো কথা বলছেন কেন। মূহুর্তে গ্যাঞ্জাম বাসময় ছড়িয়ে পরলো। আমার আইনজীবী স্ত্রী বলছে প্রচার প্রকাশনা অাইন মানা হচ্ছে না, কেউ বাসে ড্রাইভারকে থাপড়াতে চাইছে সে এক বিতিকিশ্রী অবস্থা। 

    বাস গন্তব্যে পৌঁছানোর অাগ পর্যন্ত বিষয়টি চলল। আমির টোটাল বিষয়টির জন্য কাকে দায়ি করব বুঝতে পারলাম না। আমাদের সিটের পাশের দ্রুত বীর্যপাত সমস্যা সমাধানের স্পেসাল অফারের বিজ্ঞাপনটা আমার নিস্পাপ ফুলের মতো ভাগ্নিটা দ্রুত পড়ে ফেলেছে। সে বিষয়টি বুঝতে না পেরে সূত্র মোতাবেক বড়দের জিজ্ঞেস করেছে। 

    কোন মতে সিনেমা দেখলাম সবাই গোমড়া মুখে। অর্পা কেঁদে কেটে ঘুমিয়ে পরলো। কি অদ্ভুত বিষয় আমরা ফেরার সময় সিএনজিতে উঠছি তখন শুনলাম কে যেন বেশ জোড়ে বলছে "মামা দ্রুত বীর্যপাত কি?"

    ক্লাস ওয়ানের বইতে নতুন করে বর্ণ পরিচয়ে যোগ হয়েছে ও তে ওড়না চাই। আমি পাতাটি দেখেছি। সেখানে একটি মেয়ে শিশু ওড়না গায়ে দিচ্ছে। নিচে লেখা ও তে ওড়না চাই। এই লেখাটি নিয়ে ফেইসবুকে একদল বেশ আপত্তি তুলেছে আর অন্য পার্টি তাদের তুলোধুনা করছে। যারা আপত্তি করছে তারা রেসিস্ট, তারা সর্বত্র মৌলবাদ খোঁজে, ঝামেলা ডাইকা আনে ইত্যাদি। সোজা প্রশ্ন হলো ওড়না কি কোন ধর্মীয় পোষাক? উত্তর না। তাহলে ওড়না কি কোন লৈঙ্গিক পোষাক? তার উত্তরে কেউ বলবে ওড়না শুধু মেয়েদের পোষাক কেউ বলবে ছেলে মেয়ে উভয়ের পোষাক। 


    এবার আসুন স্থান কাল পাত্র নিয়ে কথা বলি। আমাদের দেশে কি ছেলেরা সচারাচার ওড়না বা উত্তরীয় পরে? স্কুল-কলেজ কিংবা অফিস অাদালতে কি আমাদের দেশের ছেলেরা ওড়না পরে? দুই ঈদ আর বিয়ের অনুষ্ঠান ছাড়া অামি ছেলেদের ওড়না বা উত্তরীয় পরতে দেখিনি তেমন। আমরা এদেশে ওড়না প্রাপ্ত বয়স্ক মেয়েদের পরতে দেখে এসেছি। একটু যদি পরিস্কার করে বলি তাহলে বলতে হবে একটি মেয়ে যখন প্রাপ্ত বয়স্কা হয় তখন তার বৃদ্ধি পাওয়া স্তনকে অন্যের দৃষ্টি থেকে হেফাজতের জন্যই এই অালাদা বস্ত্র খন্ড পরে থাকে। ছোট বেলায় মেয়েরা সাধারণত এই ওড়না পরে না। তবে আমি অনেক অতিরিক্ত ধার্মিক সৌদি ফেরৎ পরিবারে পাঁচ ছয় বছরের শিশু কন্যাকে শুধু ওড়না নয়, কালো বোরখায় আবৃত্ত করতে দেখেছি। এটা যার যার ব্যক্তিগত বিষয়। 

    একটি দেশের সিলেবাস ভুক্ত পাঠ্য বইয়ে যা থাকে তা ঐ ক্লাসের সকল লিঙ্গের ও সকল ধর্মের ছাত্র-ছাত্রী তা পড়ে থাকে। ক্লাস ওয়ানের শিশু মনে সব সময় সব কিছু নিয়ে প্রশ্নের পাহাড় জমে থাকে। সে যখন তার বড় বোনকে ওড়না পড়তে দেখে তখন তার মাথায় কখনওই প্রশ্ন আসবে না যে অাপু কেন ওড়না পড়লো। ও আপুর পোষাক ওরকমই ধরে নেয়। কিন্তু ও যখন পাঠ্য বইয়ে দেখবে ওড়না তখন ওর যে প্রশ্ন মাথায় আসবে সে প্রশ্নের জবাব ও পাওয়ার যোগ্য আপাতত নয়, আর আমরাও উত্তর দিতে প্রস্তুত নই। কি দরকার ক্লাস ওয়ানের শিশুর ওড়না কি তা জেনে? পাঠ্য বইয়ে ওড়না দিয়ে মৌলবাদী আচরণ করা হয়েছে এটা যারা বলছেন তারা বোধহয় বইটি পুরো পড়েন নি। সেখানে একতারা রথ যাত্রার কথাও কিন্তু আছে। 


    আমি বলব ওড়নার বিষয়টি ছয় বছরের শিশুর না জানলেও চলত। ওড়না শিশুদের জন্য একটি আত্মঘাতি পোষাকও বটে। পাঠকরা নিশ্চই শুনে থাকবেন ওড়নায় প্যাঁচ খেয়ে শিশুর মৃত্যু হয়েছে অনেক। আমি কেন ক্লাস ওয়ানের বইয়ে ও তে ওড়না চাই এর বিরোধীতা করছি আমি তা একান্তই আমার যায়গা থেকে ক্লিয়ার করলাম। সবাইকে ধন্যবাদ।
     

    © সাইফুল বাতেন টিটো
    মোটাদাগের কথা
    ৫ জানুয়ারি, ২০১৭

    No comments