Header Ads

CODESMITE
  • সাম্প্রতিক লেখা:

    বিষফোঁড়া বইটি পড়ে এক মাদ্রাসার ছাত্র অনুভুতি প্রকাশ করেছেন


    বিষফোঁড়া। এটি শুধু একটি উপন্যাসের নাম নয়, একটি আন্দোলনের নাম। বলাৎকারের স্বীকার অজস্র শিশুদের অব্যক্ত কথা, নির্যাতনের কথা, না বলা কথা, লজ্জার কথা, ভয়ের কথাগুলোর মুক্তির মাধ্যম হলো এটি। ধর্ম শিক্ষার নামে, ইসলাম শিক্ষার নামে, কোরান শিক্ষার নামে প্রচলিত যে ধর্মীয় শিক্ষাব্যবস্থার অন্তরালে জঙ্গিবাদ ও সাম্প্রদায়িক প্রতিহিংসার বীজ বুনন করা হচ্ছে কোমলমতি শিশুদের হৃদয় থেকে হৃদয়ে, সেই কথাগুলো এই উপন্যাসের আংশিক চরিত্র। তবে উপন্যাসের মূখ্য বিষয় হলো— শিশু নির্যাতন। দিনের বেলায় যেসব মাদরাসা ধর্মীয় লেবাসে আড়ম্বরপূর্ণ দ্বীনের খেতমতে মশগুল, সে-সব মাদরাসার ভিন্ন রূপ মিলে রাতের বেলায়। রাত যত গভীর হয়, ততই মাদরাসার ঘোলাটে স্পষ্ট হয়। তখন একেকটা মাদরাসা হয়ে উঠে একেকটা পতিতালয়! শুধু পতিতালয় নয়, নীরব পতিতালয়!

    দেশের অভ্যন্তরে শহরে কিংবা গ্রামে যেখানে এই ধর্মীয় লেবাসে আবৃত কথিত ধর্মশিক্ষার প্রাতিষ্ঠানিক কার্যক্রম রয়েছে, সেইখানে বলাৎকারের ছিটেফোঁটা আছেই। বিশেষ করে কওমি মাদরাসায়। কওমি মাদরাসার ছাত্ররা বলাৎকারকে আরবিতে ‘লুতি কওম’ বলে ডাকে। 


    দিনের পর দিন এসব মাদরাসায় শিশু বলাৎকার, ধর্ষণ, গণধর্ষণ, পরিশেষে হত্যা করার পরেও যখন মানুষ মাদরাসার সেইসব অন্ধকার উদঘাটনে ব্যর্থ, তখন সাইফুল বাতেন টিটো দেবদূতের মতো হাজির হলেন বিভিন্ন মাদরাসায়। নানা কৌশলে, ছদ্মবেশে, ছদ্মনামে নির্যাতিত নিপীড়িত শিশুদের অব্যক্ত কথাগুলোকে পাণ্ডুলিপি আকারে ‘বিষফোঁড়া’ নামে জন্ম দিয়েছেন। তিনি চেয়েছিলেন শিশু ধর্ষণ মুক্ত একটি সমাজ জন্ম দিতে। এত এত ধর্মীয় ফতোয়ার বেড়াজালে যেখানে মানুষ ধর্মের গোঁড়ামিতে অন্ধ, সেখানে একা কারোর পক্ষে কিছুই সম্ভব নয়। তাই তিনি রচনা করলেন ‘বিষফোঁড়া’। বিষফোঁড়া’তে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত লেখা হয়নি, লেখা হয়েছে নিরীহ শিশুদের নির্যাতনের কথা। টিটো’র আন্দোলন মাদরাসার বিরুদ্ধে নয়, মাদরাসায় সংঘটিত ধর্ষণের বিরুদ্ধে। কোনো কবি, কথাসাহিত্যিক, লেখক যে কাজ সমাপ্ত করতে পারেননি, সেই কাজ সম্পুর্ন করে সাহিত্যে সমৃদ্ধতা এনেছেন সাইফুল বাতেন টিটো। একমাত্র সাইফুল বাতেন টিটো’ই বাংলা ভাষায় এতো বড় ন্যক্কারজনক ঘটনার বিবৃতি দিয়ে বই লিখেছেন, মানুষের সচেতনতা বৃদ্ধি ও শিশু নির্যাতন রোধ করার জন্য।


    ধর্ম শিক্ষার নামে, ইসলামের নামে, সুন্নতের নামে যুগযুগ ধরে নির্মমভাবে মাদরাসা নামক পতিতালয়ে একের পর এক নীরব বলাৎকার ও হত্যাযজ্ঞের নৃশংস চিত্র মাদরাসার গণ্ডি পেরিয়ে যখন নির্যাতিত শিশুদের মুখ থেকে বের হতো না, তখন-ই শ্রদ্বীয় সাইফুল বাতেন টিটো তাঁর গবেষণাধর্মী উপন্যাস ‘বিষফোঁড়া’ নাজিল করেছেন। 

    পরলোকে বেহেশতের লোভে পড়ে সেসব অর্ধশিক্ষিত, অশিক্ষিত মানুষগুলো তাঁদের আদরের ধনদের মাদরাসা শিক্ষার আলোতে আলোকিত করার লক্ষ্যে মাদরাসায় ভর্তি করিয়ে দেওয়া হচ্ছে, তাঁরা কি কখনো জানেন যে বেশ্যার ন্যায় হুজুরদের যৌনসঙ্গীর যৌনসম্ভোগের শিকার হচ্ছে কোমলতি শিশুরা! এর কতটুকু আমরা খবর পাই? কতটুকু জানি? শুধু বলাৎকার আর ধর্ষণই নয়, পরপর নির্দ্বিধায় ধর্ষণ শেষে অসংখ্যক শিশুকে হত্যা করে মেরে ফেলা হয়েছে! 

    একুশে টেলিভিশনের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৮সালে শুধু মাত্র কওমি মাদরাসায় ২১২জন, ২০১৯সালে ২৯৫জন, ২০২০সালে ৩২৭জন মাদরাসায় পড়ুয়া শিশুরা কেউ শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়েছে, কেউ-বা ধর্ষণের শিকার হয়েছে! 

    বর্তমান সময়ে গ্রামে-গঞ্জে, নগর-শহরে, পাড়ায় পাড়ায় দিন দিন ব্যাঙের ছাতার মতো মাদরাসা বৃদ্ধি পাচ্ছে। 

    অথচ মহানবী হযরত মোহাম্মদ (সা.) মহান শিক্ষক হওয়ার পরেও তিনি নিজে কোনো মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করেননি। খেলাফতের সময়ে কোনো খলিফাগণ, পরবর্তীতে ওলিগণ যা প্রয়োজন মনে করেননি, তা আজ করা হচ্ছে কেন? অথচ বর্তমান সময়ের চেয়ে তৎকালীন সময়ে মাদরাসা শিক্ষার প্রয়োজন ছিল বেশি। বর্তমানে আপনি আমি চাইলেই কোরানের বাংলা বঙ্গানুবাদ, হুবহু তর্জমা, ইংরেজি অনুবাদ, শানে নুযুল, সিয়াহ সিত্তার হাদিস, ইতিহাস ইত্যাদি ইন্টারনেটের মাধ্যমে সবকিছু আমাদের হাতের নাগালে। এখন আর একটি গ্রন্থ বইয়ের জন্য দুতিন মাইল গিয়ে খোঁজাখুজি করে কিনতে হয় না, ফ্রি-তে সব হাদিস গ্রন্থ পাওয়া যায়। মানুষ এখন চাইলে ঘরে বসে ভিডিও কনটেন্ট দেখে আরবি শিখতে পারে। হাফেজ হতে পারে। এখন আর কোরানের ব্যাখা খুঁজতে মসজিদের ইমামের দরকার হয় না। অথচ বর্বরতার তৎকালীন সময়ে এখনকার চেয়ে কোটিগুন বেশি প্রয়োজন ছিল ধর্মীয় শিক্ষার নামে মাদরাসা শিক্ষা। তখন ইন্টারনেট ছিল না, গুগুল ছিল না, এতো এতো ধর্মীয় লেবাস ছিল না, কারো নামের আগে আল্লামা ছিল না, মওলানা ছিল না, পীর মাশায়েখ ছিল না, ওস্তাজুল ওলামা ছিল না, দ্বীনে মিল্লাত ছিল না, হাজি-গাজি-ক্বারী ছিল না, তাহেরী ছিল না, আযহারী ছিল না, তাঁরপরেও নবীজি (সা.), মাদরাসা শিক্ষার প্রয়োজন মনে করেননি বিধায়, মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করেননি। হাদিসে এসেছে, নবীজি (সা.) বলেছেন- ‘জ্ঞান অর্জনের জন্য সুদূর চীন দেশে যাও।’ তিনি কিন্তু বলেননি- ‘জ্ঞান অর্জনের জন্য মাদরাসায় যাও।’

    তিনি কি জানতে না তাঁর গোনাহগার উম্মতের জন্য মাদরাসা দরকার। যেখানে মুসলমানদের সন্তানদের ধর্মীয় শিক্ষা দেওয়া হবে? ইসলামের শিক্ষা দেওয়া হবে? তিনি নিশ্চয় জানতেন, মাদরাসায় হুজুরেরা শিশুদের বলাৎকার করবে। শিশুদের দিয়ে হুজুরেরা লিঙ্গ চুষাবে, তাদের পুটকিমারা হবে। হুজুরেরা নির্মম ভাবে ধর্ষণ করে শিশুহত্যা করবে। তারপরও হুজুরেরা ‘ভালা হুজুর’ হয়ে থাকবে।

    আর এসব ‘ভালা হুজুর’এর কামনার শিকার থেকে আপনার সন্তানকে মুক্তি করার জন্যে, মাদরাসায় পাঠানো বন্ধ করুন।

    আসিব মিয়া

    সাবেক মাদ্রাসা ছাত্র 

    No comments