Header Ads

CODESMITE
  • সাম্প্রতিক লেখা:

    ভিতরে ভিতরে আমিও পুরুষতান্ত্রিক, এটা স্বীকার করতেই হবে ।। সাইফুল বাতেন টিটো

    বিষয়টি সত্যি। একটা উদাহরণ দেই তাহলে বুঝতে সুবিধা হবে। কিছুদিন আগে (০৭ জুন, ২০২২) অনলাইনে একটা সংবাদ আশাকরি সবারই নজরে এসেছে এবং নজর কেড়েছে। সংবাদটি হলো এক বছর কিংবা দুবছরের এক শিশু একটি সাপ কামড়ে মেরে ফেলেছে। একটা চমকপ্রদ সংবাদই বটে। আমিও শিরনাম দেখেছি, কিন্তু ক্লিক করে ভিতরে ঢুকে আর বিস্তারিত পড়িনি। কিন্তু নিউজটি নিয়ে আমি আর আমার এক বন্ধু কিছু সময় হাসাহাসি করলাম। এক সময় বললাম ‘দেখবেন এই ছেলে বড় হয়ে ওর বন্ধুবান্ধবদের কেমন ফাঁপড়টাই না দেয়। সে খুব সাহসি একটা ছেলে হতে পারে কিন্তু! কারণ ওকে তো সাবই এই গল্প বিভিন্ন সময় বলবে’। আমার বন্ধুও গলা মেলালো। ‘হ্যাঁ হ্যাঁ, ঠিকই বলেছেন’। এরপর আলোচনা অন্যদিকে চলে গেলো।


    ছবি কৃতজ্ঞাতা: https://www.jugantor.com/



    সন্ধ্যায় আরেক বন্ধুর সাথে দেখা। সেও নিউজটার কথা উঠালো। তখন আমি আবার ঐ একই কথা রিপিট করলাম। ‘দেখবেন এই ছেলে বড় হয়ে ওর বন্ধুবান্ধবদের কেমন ফাঁপড়টাই না দেয় সে খুব সাহসি একটা ছেলে হতে পারে কিন্তু! কারণ ওকে তো সাবই এই গল্প বিভিন্ন সময় বলবে’। তখন সাথে সাথে আমার এই বন্ধু বলে উঠলো ‘শিশুটি তো ছেলে না, একটা মেয়ে শিশু। সাথে সাথে আমার ভিতরে একটা ধাক্কা লাগলো। উহু! আমি এখনও স্বাভাবিক একজন মানুষ হয়ে উঠতে পারিনি। আমার ভিতরে এখনো পুরুষতান্ত্রিকতা লুকিয়ে আছে, এবং বেশ ভালো ভাবেই আছে। না হলে সাপ কামড়ে মেরে ফেলা শিশুটিকে আমি ছেলে ধরে নেবো কেন? আমি যদি এতো বা*ল পাকনা ভবিষ্যত বাণী করতেই চাই তাহলে তো আমার প্রথমেই খোঁজ নেয়া উচিৎ ছিলো যে শিশুটি ছেলে শিশু না মেয়ে শিশু। তার পর নাহয় কথাটি বলতাম। কিন্তু তা না। সাপ কামড়ে মেরে ফেলা যে একটা বীরত্বপূর্ণ কাজ আর সেটা কোনো মেয়ে করবে তা আমার মনের অবচেতন অংশেও নাই! সেখানেও পুরুষই আছে।

    বিষয়টা আমাকে বেশ ভাবিয়ে তুলল। তাহলে এই যে এতোদিন এতো বইটই পড়লাম, নিজে বড় গলায় কথা বললাম, লিখলাম সেসব কি তাহলে সো-আপ? আজ যে কথাটা বললাম সেটা তো একেবারেই মন থেকে চলে এসেছে। আমি পরিকল্পনা করে বলিনি। পরে বুঝলাম যে হ্যাঁ, একদম গভীরে আমি আমিও পুরুষতান্ত্রিক। কারণ আমাকে আমার চারপাশের পরিবেশ, রাজনীতি, ধর্ম, অর্থনৈতির চালকেরা সবাই মিলে আমার জন্মের পর থেকে বিগত ৩৯ বছর ধরে দায়িত্ব নিয়ে পুরুষ করে গড়ে তুলেছে। আমাকে বুঝিয়েছে তুমি আসলে শ্রেষ্ঠ! অন্তত নারীর চাইতে তো বটেই। উঠতে, বসতে, খাইতে, নাইতে, যাইতে, পাইতে সব যায়গায় আমাকে বোঝানো হয়েছে তুমি পুরুষ, তুমি নারীর চেয়ে শ্রেষ্ঠ। সেটা আমার পরিবারের সদস্যরাও শিখিয়েছে, স্কুলের স্যারেরা শিখিয়েছে, কর্মক্ষেত্রে বসেরা শিখিয়েছে। ফলে একসময় পুরুষতন্ত্র আমার জিনে ঢুকে গেছে। এর থেকে বের হওয় কী আদৌ সম্ভব?

    আমি জীবনে ভালোমন্দ যা শিখেছি তার বেশিরভাগটাই আমার মায়ের কাছ থেকে। আমার মাও আসলে পুরুষতান্ত্রিক। মাকে প্রায়ই শুনতাম তিনি নারী আর পুরুষের উদাহরণ দিতেন পানি আর আগুন দিয়ে। এর কারণ কী? এর কারণ আমার বাবা ছিলেন একজন ভয়ঙ্কর নারীনির্যাতক পুরুষতান্ত্রিক পুরুষ। ফলে আমার মায়ের মনে হয়েছে পুরুষ মানেই আগুন। ঐ শিক্ষা খুব স্বাভাবিক ভাবে আমার মধ্যেও প্রবাহিত হয়েছে। অন্যান্য পুরুষের ক্ষেত্রেও এমন হয়েছে বলে আমার ধারণা। একথা বলাই যায় যে আমারা মানুষেরা জন্মের পর থেকেই পুরুষ তান্ত্রিক হয়ে হয়ে উঠি, আমৃত্যু তাই থাকি। কেউ কেউ পুরুষতান্ত্রিক না এমনটা অভিনয় করতে পারি মাত্র, এর বেশি কিছু না।

    এই অভিনয় আমারা যারা করি তারাও যে ভিতরে ভিতরে পুরুষতান্ত্রিক তার আরেকটি প্রমান হলো আমারা কখোনোই নারীর কোনো দোষ দেখিনা। মনে করি নারী কোনো অপরাধই করতে পারে না। এর মানে হলো অপরাধ করতে হলে যে শারীরিক ও মানসিক শক্তিমত্তার দরকার তা আসলে নারীর নাই। আমি ক্লাশ এইট পর্যন্ত মনে করতাম মেয়রা মনেহয় পরীক্ষায় নকল কারার মতো অপরাধ করতে পারে না।

    অপরাধ তো অপরাধই সে নারীপুরুষ যে কেউ করতে পারে। গতকালও দেখলাম এক নারী তার সন্তানকে হত্যা করেছে পরকীয়ার কারণে, তার কিছুদিন আগে দেখলাম মালয়শিয়া প্রবাসীর স্ত্রী লোকটির সব টাকা পয়সা সহায় সম্পত্তি নিয়ে অন্যত্র উঠেছে, আরেকজনের সাথে সংসার পেতেছে। স্বামীকে বাড়ীর আসপাশেও ঘেঁষতে দিচ্ছে না। হ্যাঁ অনুপাতের দিক থেকে দেখতে গেলে হয়তো নারীর চেয়ে পুরষ অপরাধী কয়েকগুন বেশি। কিন্তু নারী কেন অপরাধী হবে না? বা অপরাধী হলেও আমারা কেন ইনিয়ে বিনিয়ে নারীর পক্ষেই কথা বলি? বলি কারণ আমরা পুরুতান্ত্রিক। আমরা মনে করি অপরাধী হইতে হইলে যে হিম্মত থাকার দরকার তা আসলে নারীর নেই।

    আমাদের এই মানসিকতার পরিবর্তন কি আদৌ সম্ভব? আমার মনে হয় না। তবে আমাদের আমৃত্য চেষ্টা করা উচিৎ এই ধারণা থেকে বের হয়ে আসা। এর বেশি কিছু না হয়তো আমরা করতেও পারবো না।


    সাইফুল বাতেন টিটো
    ০৮-০৬-২০২২
    পোখারা, কাস্কী
    নেপাল।

    No comments