ফ্ল্যাশব্যাক দুই ।। ডাইরি ।। সাগর পাহাড় জঙ্গলে
পেঁচার দ্বীপ, কক্স বাজার
১৮/০৬/২০১০
সায়দাবাদ থেকে কলাতলি আসতে যে ঝক্কি পোহাতে হয়েছে সে গল্প না হয় আরেকদিন বলা যাবে। কক্সবাজারে নামার পর প্রথমেই মনে পড়ে গেলো আমার সেই দুর্দান্ত আর্মি লাইফের কথা। প্রায় এক বছর ছিলাম এখানে। আক্ষরিক অর্থে যদি বোঝানো হয় তাহলে ঐ এক বছর মন প্রান দিয়ে দেশের সেবা করেছি। সে আরেক গল্প।
আমাকে বহনকারী সিএনজি মার্মেই ইকো রিসোর্টে ঢোকার সময় সেখানকার উর্দি পরা দারোয়ান সহ সবাই উঠে দাঁড়ালো। আমাকে নিশ্চই রিসোর্টের সম্মানিত গেস্ট ভেবেছে তারা। একজন সিকিউরিটি গার্ড আমার ব্যগ সহ আমাকে রিসিপশনে নিয়ে গেলো। অনেক সুন্দর করে সোহাগ ভাই সাজিয়েছেন রিসোটটিকে। এই যায়গাটি আমার জন্য নতুন নয়। আমি এখানে আগেও এসেছিলাম। ২০০৭ সালে। তখন এখানে রিসোর্ট ছিলো না। এই জমিও সোহাগ ভাইয়ে কব্জায় ছিলো না। যখন আমি আর সোহাগ ভাই এসেছিলাম তখন জমিটা কেনা বেচা নিয়ে কথা চলছিলো।
এখন এখানকার রুপ চেহারার ব্যপক পরিবর্তন করা হয়েছে। উঠেছে সুন্দর সুন্দর অনেক কটেজ। পরিকল্পিত ভাবে লাগানো হয়েছে অনেক ধরনের সৌন্দর্য বর্ধক গাছ। জাহাজের পুরানো কাঠ দিয়ে তৈরি কটেজ গুলোতে যেতে হয় নানা রকম কৃত্রিম বাধা পেরিয়ে। বাধা গুলো পার হওয়া কষ্টের নয়, তবে লুকটা একটা এ্যডভাঞ্চারাস লুক। দেখতে বেশ সুন্দর লাগে। সিকিউরিটি গার্ড রিসিপশনে নিয়ে একজনকে বললেন
- স্যার উনি এমডি স্যারের বন্ধু। ঢাকা থেকে এসেছে। একটু স্যারের কাছে নিয়ে যান।
গোলগাল মুখের উপর কয়েকটি দাগ সহ সুন্দর চেহারার শ্যামবর্ণের শক্ত পোক্ত দেখতে ৩৫/৩৮ বছরের এক সৌম্য ভদ্র লোক আমার বেশ সুন্দর কওর বলল
- গুড আফটার নুন স্যার।
- গুড আফটার নুন।
- চলুন এমডি স্যারের কাছে যাই।
উনি আমাকে ‘‘নো এন্ট্রি’’ লেখা একটি গেট পেরিয়ে যেখানে নিয়ে গেলেন সেখানটা দেখলে নন মিডিয়ার লোকেরাও দেখলে বুঝতে পারবে যে এখান স্যুটিং চলছে। এদিক সেদিক লাইট, তার, থার্মোকল, ক্যামেরা, ট্রাইপড, ট্রলির পাইপ, কোথাও মনিটরের সামনে বসে আছে কেউ। একটু এগোতেই দেখি বসে আছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার প্রাপ্ত অভিনেতা জনাব আরমান পারভেজ মুরাদ, পাশেই আমার প্রিয় একজন অলস পরিচলক রাজীব আহমেদ। যার কাজ দেখে আমি মুগ্ধ হয়েছি বছর দুয়েক আগে, আর বর্তমানে তার উপর আমি যথেষ্ট বিরক্ত কারন উনি খুবই অলস। পাশে বসা আছে ক্যামেরা ম্যান সাচী ভাই। একানকার সবাই আমার মিডিয়ায় কাজের সূত্রে পূর্ব পরিচিত। সবাইকে নিজের যায়গা থেকে হাই হ্যালো করলাম। দাৃৃৃঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে স্যুটিং দেখছি আর সোহাগ ভাইকে খুঁজছি মনে মনে।
ফ্রেম করা শেষ ডিরেক্টর রজিব ভাই এ্যাকশন বলার দুসেকেন্ড আগে হাতে একটা কাঠ গোলাপ নিয়ে ফ্রেমে ঢুকলেন এলিয়েন সোহাগ। রোল করে রাখা দুটি তোয়ালের মাঝখানে রাখতেই ফ্রেমটা কেমন যেন বেশী জীবন্ত হয়ে উঠলো।
আমি ফোন করলাম শাহীন জমাদ্দারকে। শাহীন আমার পূর্ব পরিচিত। মার্মেইডেই চাকরী করে। যাকে আমি সোহাগ ভাইয়ের কাছে একটি চিঠি দিয়ে পাঠিয়েছিলাম চাকরীর জন্য। সোহাগভাই আমার প্রতি সম্মান দেখিয়ে শাহীন জমাদ্দারকে চাকরী দিয়েছেন। এই শাহীনের সাথে পরিচয়েরও একটা মজার গল্প আছে। সেটা নিয়ে একটা সিনেমা করার ইচ্ছা আছে। এর মধ্যে আমার সাথে চোখাচোখি হলো সোহাগ ভাইয়ের সাথে।
- হাই সোহাগ ভাই...!!!
- আর্রে স্সাইফ্ফুল ব্বাতেন টিটো কি খবর? কেমন আছো?
সবাই আমার দিকে ঘুরে তাকালো। আমি লজ্জায় পরে গেলাম।
- এইতো ভাই আছি, আপনি কেমন আছেন?
- ভালো কখন আইছো?
- এইতো ঘন্টা খানেক...
- এ্যাড বানাইতাছি, মার্মেইডের এ্যাড, ভালো সময় আইছো।
- হ, রাজীব ভাই মুরাদ ভাইকে দেখলাম।
- খালি স্যুটিং দেইখোনা। কাজে হেল্প কইরো।
- আচ্ছা ভাই।
- আর সময় মতো খাইয়া নিয়ো।
- আচ্ছা ভাই।
আমি স্যুটিং দেখতে থাকলাম আর পূর্বের জ্ঞান দিয়ে সাধ্য মতো সহযোগীতা করতে লাগলাম।
কিছু সময় পর শাহীন জমাদ্দার ফোন করলো।
- শাহীন ভাই কই আপনি?
- এই তো আমি রিসিপশনে, তুমি কই?
- আমি স্যুটিং এর লোকেশনে।
- আচ্ছা তুমি দাঁড়াও আমি আইতেছি।
আমি দাড়িয়ে রইলাম।
আমার ডাইরি ‘সাগর পাহাড় জঙ্গলে’থেকে
সকল ধরনের কপিরাইটঃ সাইফুল বাতেন টিটো
No comments