Header Ads

CODESMITE
  • সাম্প্রতিক লেখা:

    আমার মায়েরও মাসিক হতো, আমার স্ত্রীরও হয়, আমার মেয়েরও হবে ।। মোটাদাগের কথা


    একদিন সকাল বেলা আমি দীপ্ত টিভিতে থাকতে সকাল নয়টার দিকে সেটে ঢুকে শুনি লাইটের নুরু কস্টিউম ডিজাইনার তৃষা রয়ের সাথে ক্যা ক্যা করছে একটা সিঙ্গেল সোফায় বসে। তৃষা সেখানে অনুপস্থিত। সোফার সামনে একটা সোলার লাইট, ক্যাবল, এইচএমআই ইউনিট রাখা তার পর সোফা। তার পাশে একটা ডবল সোফা। আমি ডবল সোফায় বসতে বসতে ওর ক্যাটক্যাটানি শুনছি।


    - কি হয়েছে নুরু সক্কাল সক্কাল?
    - ছান ছাই টিটু বাই... মাইনষের আন্দাজ ক্যামোন
    নোয়াখালির অঞ্চলিক ভাষায় ক্ষোভ ঝড়ে পরছে ওর কন্ঠে।
    - কি হয়েছে বলো।
    - আরে সকাল সকাল তৃষা আইসা এই ক্যাবলটা ডিঙ্গাইয়া গ্যালো। আমার দিনডা শ্যাষ....
    বলে আমার পায়ের কাছে দেখালো। আমি আমার পায়ের কাছে তাকিয়ে দেখি একটা মোটা ক্যাবল যার সাথে আমার জুতার ডগা লেগে আছে। আমি ভয়ে পা সরিয়ে নিলাম। বললাম
    - ডিঙিয়েছে তো কি হয়েছে? তাতে এতো চিল্লাফাল্লা করছ কেন? আমি তো ডিঙিয়ে মাড়িয়ে আসলাম। কই আমাকে তো কিছু বললে না.... কেন আমি ওর চেয়ে বেতন বেশী পাই বলে
    নুরু গলার স্বর নীচু করে আমার মুখের কাছে মুখ এনে বলল
    - আরে বাল আন্নে কিছু বুজেন না হ্যাডা। হ্যাতে অইলো 'মিয়া' মানুষ। আইজ্জা হ্যাতের মাসিক আছে কি না কে জানে.... আর হারা দিনডা ফুটকি মারা যাইবো জানেন নি আন্নে?



    আমি জাস্ট স্টুপিড হয়ে গেলাম।
    মানে কি বলে? এমন কথা আমি আমার ৩৩ বয়সে প্রথম শুনলাম। আমি ওর দিকে চরম বিস্ময়ে শুধু তাকিয়েই রইলাম কিছুক্ষন। আর মনে মনে বার বার নিজেকে প্রশ্ন করতে থাকলাম 'বলে কি ছেলেটা? বলে কি ছেলেটা?' নূরু পঞ্চম শ্রেণী পাশ একজন লাইট কর্মী। সমাজের বেশীরভাগ মানুষেরর আর্থসামাজিক লেভেলে ওর বিচরণ। সদ্য সপ্তম শ্রেণী পড়ুয়া একটি শিশুকে বিয়ে করেছে সে। আমি ভাবলাম আচ্ছা নূরু কি ওর মায়ের সম্পর্কেও এমনটা ভাবে যে ওর মাও অপবিত্র? বা ওর বোন? আমার মায়ের মাসের কোন সময়ে মাসিক হতো তা আমি জানতাম না। বোধহয় পৃথিবীর কোন সন্তানই জানে না। কিন্তু নুরুর মতো সন্তানেরা কি তাহলে কি তার মাকে সারা জীবনই অপবিত্র ভাবে

    - নূরু তৃষার মাসে মাসে রক্ত পরা থেকে যে তোমার আমার পয়দা তা তো মনেহয় জান এখন, যেহেতু বিয়ে করেছো।
    - আন্নে হ্যাডার আলাপ কইরেন না, হ্যায় অপবিত্রই। এই সময় মাইয়াগো রোজা নামাজ ফইজ্জন্ত নিশিদ্দ, জনেন নি আন্নে? হ্যাতে তো হিন্দু, হ্যাতের কতা জাইন্না।
    - তুমি কি জান যে আজ ওর প্রিয়ড চলছে
    - আই ক্যান্নে জানুম? বলে নুরু একটু অন্য ভাবে হাসল এবার। আমার পিত্ত জ্বলে জাচ্ছিলো।
    - তুমি তো তোমার বউ ছাড়া কারো খবরই জানো না যে কার কখন কি চলছে। তাইলে যে কোন মেয়েই কি যেকোন সময় অপবিত্র
    - আন্নে এহন ফাউল টক কইত্তেছেন। আন্নে আর লগে জরগার দান্দা কইত্তেছেন। এই মামুইন্না ওঠ সাবা আপুর ঘরে লাইট কর..... বলে নূরু উঠে গেলো।
    আমি এক অদ্ভুৎ অনুভুতি নিয়ে বসে থাকলাম। এইটা কি বলে গেলো এই জমাজের পুরুষ? সে নারীকে নিয়ে এই ভাবেএই সমাজের বেশীরভাগ পুরুষের প্রতিনিধি একজন নারী সম্পর্কে এমন নোংড়া, নীচ, হীন ভাবনা শেখে কোত্থেকে? সে ধর্মের দোহাই দিয়ে উঠে গেলো। আমি বিয়ের আগ পর্যন্ত কাছ থেকে মেয়ে বলতে আমার মাকেই দেখেছি। আমার কোন বোন নাই। মাসের যে কয়টা দিন আমার স্ত্রীর প্রিয়ড চলে কেন জানি না আমার মধ্যে এক ধরনের অপরাধ বোধ কাজ করে। সত্যিই জানি না তা অবশ্য ঠিক না। সময়ে কোন কাজ করলে আমার কষ্ট হয়। মনেহয় বোধহয় তলপেটে ব্যথা নিয়ে রান্না করেছে। আমাদের যেমন অপশন আছে চিল্লাইয়া দুনিয়া মাথায় তোলার তেমনি মেয়েদের নানা কারণেই সেই অপশন নেই। আমার ধারণা মাসের এই কটা দিন মেয়েরা যে অবর্ণনীয় কষ্ট ভোগ করে তা সে স্বামী সন্তান কাউকেই কখনও বলে না বা বোঝাতে পারেনা। কিন্তু আমরা পুরুষেরা তাকে অপবিত্র ভাবি। রোজার দিনে অফিসে দাঁত কেলিয়ে মেয়ে কলিগকে জিজ্ঞেস করি 'কি রোজা আছেন না নাই?'

    তৃষা রয় আর নুরু উদাহরণ মাত্র। কিন্তু এটাই আসল চিত্র। তাই আমি মা তোমাকে বলছি, বোন তোকে বলছি, প্রিয়তমা তোমায় বলছি - বুঁকের আঁচল কোমরে কষে বাঁধো গো ভগিনি। পুরুষের কাছে অধিকার চেয়ে নিজের মনুষত্বকে বিলিন করো না, অপমান হতে দিওনা মাতৃত্বের। দরকার পরলে আবার নাও সংসারে ভার। আগের মতো। তোমাদের বজ্জাৎ ছেলেরা সব নষ্ট করে ফেললো যে.....

    ©
    সকল ধরণের কপিরাইটঃ সাইফুল বাতেন টিটো

    ১০ মে, ২০১৭

    No comments