Header Ads

CODESMITE
  • সাম্প্রতিক লেখা:

    অশনি সংকেত ।। মোটাদাগের কথা


    ক্লাস টু থ্রির প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়েছে। এ নিয়ে আমাদের মাননীয় শিক্ষা মন্ত্রি বলেছেন – যুগ যুগ ধরে প্রশ্ন ফাঁস হচ্ছে, গণমাধ্যম বাড়িয়ে বাড়িয়ে এখন প্রচার বেশি।


    মাননীয় মন্ত্রি খুব বেশি খারাপ বলেন নি। তবে অবস্থার যে এত উন্নতি (!?) হয়েছে তা হয়ত উনি বুঝতে পারেন নি। কয়েকটি অভিজ্ঞতার কথা বলি। যাকে বলে রিয়েল লাইফ এক্সপেরিয়েন্স।
    আমি যখন কক্সবারাজে থাকতাম তখন আমার সাথে বরিশালের এক বড় ভাইয়ের সাথে পরিচয় হয়েছিলো। সঙ্গত কারনে আমি তার নাম বলতে চাইনা। লালন ভক্ত নির্লোভ মজার মানুষ উনি। তার বাবা সরকারী চাকরী করেন। আর উনি একটি বিমা কোম্পানীর বড় কর্মকর্তা। ঢাকায় বাবা মা ভাইবোনের সাথেই থাকেন। আমি কক্সবাজার পর্ব গুটিয়ে ঢাকায় আসার পরও ওনার সাথে আমার যোগাযোগ রয়ে যায়। আমাদের প্রায়ই দেখা হয় শাহবাগের ছবির হাটে। আড্ডা দেই, চা সিগারেট খাই, গল্প করি। তো একদিন আমরা বসে আড্ডা দিচ্ছিলাম উনি বললেন- আমি আর আমার পরিবার আমার ছোট ভাইটা নিয়ে ভীষন ভীষন দুশ্চিন্তায় আছি। আমি স্বভাবতই জানাতে চাইলাম, কেন। এর পর উনি যা বললেন তা আমার কাছে আসলেই অদ্ভত ঠেকালো।

    ‘আর কইয়ো না। ভাইডা গোল্ডেন এ প্লাস পাইছে তো এইডা নিয়া আমরা সবাই দুশ্চিন্তায় আছি।‘
    ‘মানে কি? গোল্ডেন এ প্লাস এর চাইতে ভালো রেজাল্ট আর কি আশা করেছিলেন?’
    ‘তুমি বোঝনাই ব্যাপারটা। গোল্ডেন এ প্লাস তো বহু দুরের কথা, ওর তো কোন সাবজেক্টেই পাশ করার কথা না।‘
    ‘মানে কি?’
    ‘তাইলে বোঝ এবার…! যে ছেলের কোন সাবজেক্টেই পাস করার কথা না সে যদি পায় গোল্ডেন এ প্লাস তাহলে কি তার অভিবাবকদের দুশ্চিন্তা করার কথা না? সে হলো একজন প্রফেসনাল হিরোইন খোর। তার কাজই হচ্ছে হিরোইন খাওয়া আর হিরোইনের টাকার জন্য চুরি চামারি করা।‘
    ‘বলেন কি ভাই আপনার পরিবারে এরকম একটা ছেলে তো আশাই করা যায়না।‘
    ‘কিচ্ছু করার নাইরে ভাই। আমরা ভাবছিলাম যদি রিহ্যাব করে টরে আবার নতুন করে শুরু করা যায় কিনা। হয়তো চিকিৎসা শেষে আবার নতুন করে নাইনে ভর্তি করে সুন্দর জীবন শুরু করাব। কিন্তু তা তো আর সম্ভব হলো না। সে এখন এসএসসিতে গোল্ডেন পাইছে। তারে তুমি কি আর নতুন করে নাইনে ভর্তি করাতে পারবে? এইটা দুনিয়ার কেউ মানবে?’
    ‘কেন তার দরকার কি?’
    ‘এইতো এবার লাইনে আইছ। তার দরকার আছে বলেই তো এত চিন্তা করছি। সে ক্লাস নাইন থেকে বেশীরভাগ বিষয়েই ফেল করতে করতে এসছে। টেষ্টে সে একটা সাবজেক্টেও পার করেনাই।‘
    ‘তার পরও তাকে এলাউ করলো কিভাবে? কোন স্কুলে পড়তো সে?’
    ‘এলাউ করছে আমার বাবার কারনে। যদিও আমার বাবা চায়নি সে এলাউ হোক। তার পরও স্কুল এলাউ করছে, পরীক্ষা দিতে দিছে কিন্তু এখন তো গোল্ডেন এ প্লাস পেয়ে বসে আছে। এখন?’
    ‘তার মতামত কি?’
    ‘সে তো এখন মহারাজা। গোল্ডেন এ প্লাস পাইসে তারে পায়কে? এখন কলেজে পড়বে। হিরোইনের পাশাপাশি পার্ট টাইম ইয়াবা খাবে, ছিন্তাই শুরু করবে। এখনই ছিন্তাই টিন্তাই করে কিনা কে জানে?’
    ‘এখন কি করবেন ভাবছেন?’
    ‘কি আর করব? আইএ ভর্তি করে দিতে হবে। তারপর হয়তো আইএ টাও এইভাবেই পাশ করবে, একসয় অনার্স পাশ করবে। আরো জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় বোঝই তো।‘
    ‘হ আদুভাই বানাইয়া ছাইড়া দেয়।‘
    ‘বয়স ত্রিশ হওয়ার তিনমাস আগে হয়তো অনার্স পাশ করবে কুইত্তা মুইত্তা। তারপর ঘুষ আর বাপের মুক্তিযুদ্ধের সার্টিফিকেট দিয়া একটা চাকরী পাবে। কিন্তু দেশ?? তোমার আমর মতো গাধাগো ঘামের টাকা দিয়া অর মতো একটা কোয়ালিটি লেস লোক দিয়া কাজ করাবে। মানে দেশ খাবে গোয়ামারা। বুচ্ছ এইবার আমি ক্যান চিন্তিত? দেশটা তো শুধু হিরোইন খোর আর ঘুষখোরদের না ভাই। এইটা তো আমরও দেশ। তাইনা? আমারও তো কইলজা পোড়ায়।‘



    কিন্তু এই চিন্তা কয়জন অভিবাবকের আছে? আমার বন্ধু আশরাফুল বারী এখন বিশ্ব সাস্থ সংস্থার বড় কর্ম কর্তা। একসময়ে সে প্রাইভেট পড়িয়ে চলত। তো তাকে ফোন করে তার কয়েকদিন আগে ছেড়ে আসা এক স্টুডেন্টের মা বলছে- ‘স্যার সারাদিন ল্যাপটপ নিয়ে বসে থাকেন আপনি আর সবাই পরীক্ষার আগের রাতে প্রশ্ন পায় আর আমার মেয়ে পেলো না। কি করেন আপনি?’
    আমারেদর দেশের সব ছাত্র-ছাত্রীর বাবা-মা ই চায় তার সন্তান স্কুলে পরীক্ষায় প্রথম হোক, বেশী নম্বর পাক। আর তা যে করেই হোক। তাহলে তার বাবা অফিসের কাজ বাদ দিয়ে দাঁত কেলিয়ে কেলিয়ে গল্প করবে আর মা স্কুলের সামনে পেপার বিছিয়ে অন্য মায়েদের সাথে নিজের নতুন কেনা শাড়ী আর পাশের বাসার ভাবীর শাড়ী তুলনা করবে কিংবার সিরিয়ালের কাহিনি আর ফাকে ফাকে নিজের ছেলে মেয়র প্রসংসার করতে পারবে। ছেলে মেয়ে আসলে কি শিখলো তাদে তাদের থোরাই কেয়ার।

    শিক্ষা ব্যবস্থা:
    আমাদের দেশে তিন ধরনের শিক্ষা ব্যবস্থা প্রচলিত- ক) সাধারন স্কুল কলেজের শিক্ষা খ) মাদ্রাসা শিক্ষা, গ) ইংলিশ মিডিয়াম শিক্ষা।
    খেয়াল করে দেখুন সব চাইতে বেশী ছেলেমেয়েরাই পড়াশুনা করে সাধারন স্কুল কলেজে, তার পর মাদ্রাসা, আর সবচাইতে কম পরিমান ছেলেমেয়ে পড়ে ইংলিশ মিডিয়ামে। ইংলিশ মিডিয়ামের পড়াশাশুনা করানোর সাধ্য কোন সাধারন আমজনতার নেই। এখানে সবাই পড়তে পারেনা। পড়তে লাগে বেশ মোটা অংকের টাকা। কিন্তু মজার বিষয় এখানে প্রশ্ন পত্র ফাঁসের কোন সুযোগ নেই। মাদ্রাসাতেও এই প্রশ্ন পত্র ফাঁসের কথা শোনা যায়নি। তবে মাদ্রাসায় বই খুলে লেখার ট্র্যাডিশন বহুদিনের।

    এবিষয়ে আমার ছোট বেলার একটা অভিজ্ঞতা আছে । তখন আমরা নানা বাড়ী যাওয়া আসা করতাম নৌকায়। তো একদিন নানা বাড়ী থেকে ফিরছি আমরা। আমাদের সাথে রয়েছে এক মামা। এক সময় জানতে পারলাম মামা আমাদের বাড়ীতে যাবে না, যাবে আমাদের বাড়ীর কাছের এক মাদ্রাসার হোস্টেলে। ঐ মাদ্রাসা থেকে কয়েকদিন পরেই নাকি মামা দাখিল পরীক্ষা দিবে। 

    আমার কাছে বিষয়টি খটকা লাগলো। তখন আমি ছোট ঠিকই কিন্তু মাদ্রাসা স্কুলের তফাত বুঝতাম। যতদুর জানতাম মামা এতদিন স্কুলে পড়াশুনা করেছে। ৬/৭ বার পরীক্ষা দিয়েও সে কোন ভাবেই এসএসসি পাস করতে পারেনি। কিন্তু সে হঠাৎ করে মাদ্রাসা থেকে দাখিল পরীক্ষা দিবে কি করে? মাদ্রাসায় তো অনেক আরবি থাকে বা অন্যান্য বই থাকে যা আমার কাছে বরাবরই অনেক অনেক কঠিন লাগতো। তখন আমি বরং মাদ্রাসার ছাত্রদের আলাদা করে সমীহ করতাম এই কারনে যে তারা কত্ত কঠিন বিষয় পড়ে পাশ করে! 




    তো মামা কি করে হঠাৎ করে পারবে? আমি মায়ের কাছে জানতে চাওয়ায় মা চাপা স্বরে বললেন মামা নাকি আল্লাহর বিশেষ রহমতে পাশ করে যাবেন। আমিও ভাবলাম হয়তো তাই। সন্ধার কিছু আগে আগে আমাদের নৌকা গুদিঘাটা নামক স্থানে ভিড়লো। মামা লাফিয়ে নামলো নৌকা থেকে। কাছাকাছি লেহাজ শরীফ নামক মামাদের এক পারিবারিক ওঝার কাছ থেকে পানি পড়া, শরিষা তেল পড়া ইত্যাদি নিয়ে এলেন আল্লাহর রহমত হিসেবে যা মামার ভালো ফলাফলে সহায়তা করবে। শুনলাম সে নাকি একটা কলম (ফাউন্টেন পেন) আর এক দোয়াত কালিও ফুঁ দিয়ে এনেছে। মা আবার সেই কালি সাবধানে রাখতে বললেন। নিয়ম হলো এখন থেকেই এসব ব্যবহার করতে হবে আর যখন ফুঁ দেয়া আইটেম ফুরিয়ে আসবে তখন তাতে আবার নতুন করে মিশালে পুরোটা পড়া পানি বা কালি হয়ে যাবে। 


    যাই হোক মামা আমার জন্য দুটি পাকা সফেদা নিয়ে এসেছিলো। আমি খেয়ে ঘুমিয়ে পরেছিলাম। হঠাৎ আব্বুর চাপা রাগান্বিত কন্ঠে আমার ঘুম ভেঙে গেলো। বুঝলাম আব্বু রাগের বিষয় মামার মাদ্রাসা থেকে পরীক্ষা দেয়া সংক্রান্ত। আমি বিষয়টি বোঝার জন্য ঘুমের ভান করে ঘাপটি মেরে পরে রইলাম। শুনলাম আব্বু মামাকে বলছে

    ‘এই সার্টিফিকেট দিয়ে কি হবে? কি শিখবি তুই? ভবিশ্যতে কি করে খাবি?’
    মামা কোন কথা বলছে না। মাথা নিচু করে বসে আছে। আব্বু আবার বলছে
    ‘তুই লেখাপড়া বাদ দে। সবার লেখাপড়া করতে হবে এমন কোন কথা নেই। অন্য কাজ কর।’
    আমি বিষয়টি ধরতেই পারছি না। তবে আব্বুর শিক্ষক সুলভ আচরণ বলে দিচ্ছে কিছু একটা গন্ডগোল আছে। আমার প্রয়াত শিক্ষক বাবা সবাইকেই ছাত্রজ্ঞান করে কথা বলতেন। 


    যাই হোক অনেক সময় ঘাপটি মেরে থেকে যা বুঝলাম তার সার মর্ম হলো যহেতু মামার কোন সম্ভাবনাই নেই স্কুল থেকে এসএসসি পাশ করার তাই মামা মাদ্রাসা থেকে দাখিল পাশ করে অন্তত একটা হলেও শিক্ষা সনদ পেতে চায়। আর মাদ্রাসা থেকে মামার এই কারনে পাশ সম্ভাবনা রয়েছে কারণ মাদ্রাসায় রহমত বরকত রয়েছে। তবে সেই রহমত বরকত আল্লাহর না, মাদ্রাসার শিক্ষকদের বর্ষন করা রহমত। মানে হলো নকল!!! মাদ্রাসার শিক্ষকেরা বই খুলে লিখতে দিবে মামাকে। এই হলো আসল রহমত আসল বরকত। তবে “ঐ” নির্দিষ্ট মাদ্রাসার অতিরিক্ত সুবিধা হলো আগে আগে প্রশ্ন পত্র ফাঁস করে করে ছাত্রদের প্রাকটিসের সুযোগ দেয়া হয়। মানে পাশ না কবে যাবে কই? আলেম বানিয়েই ছাড়বে। কিন্তু এর জন্য মামাকে একটু বেশী টাকা গুনতে হবে। সেটা বিষয় না। মামার বাপের টাকার শেষ নেই। মাদ্রাসার বড় বড় শিক্ষকদের সাথে মামার নাকি এব্যপারে বেশ চমৎকার ডিল হয়েছে। আর এমন তো শুধু মামা একা নয় অনেকেই আছে। এসব কাজে ঐ মাদ্রাসার সুনাম নাকি কিংবদন্তি লেভেলের। মামা এবার পাশ করেই ছাড়বে। আমি আরো গভির ঘুমের অভিনয় করে পরে রইলাম।


    মামা সেবার দাখিল পাশ করেছিলো। আমাদের বাড়ী গিয়েছিলো মাটির হাঁড়িতে করে এক হাঁড়ি রসগোল্লা নিয়ে। আব্বু স্কুল থেকে ফিরে পুরো হাঁড়ি ধরে ফেলে দিয়েছিলেন। তাতে মায়ের কি অভিমান! আব্বু বিকেলে আমাকে নিয়ে বাজারে গিয়ে মিষ্টি কিনে খাওয়ালেন, বাড়ীর জন্য মিষ্টি নিলেন। দোকানে এক কোনায় বসে বাপ পুত বসে বসে রসগোল্লা খেতে খেতে আব্বু বললেন
    ‘সারা জীবন টেক্সট বই পড়বি, কোন দিন গাইড বই নোট বই পড়লে সর্দ কইরা ফালামু। (মানে খুন করে ফেলব)’


    সর্দ হওয়ার ভয়ে আমরা তিন ভাই কোন দিন আর নোট বই গাইড বই পড়িনি এমন কি আমি চোখেও দেখিনি। তবে মামার আর্থিক অবস্থা আমার চেয়ে আব্বুর চেয়ে ঢের বেশী ভালো। বোধ করি মামার উপরে আল্লাহ তাহার রহমতের ভান্ডার উপুর করিয়া ধরিয়াছে।

    তো যে কথা বলছিলাম, প্রশ্ন পত্র ফাঁস হয় শুধু সাধারন লাইনে। যেখানে দেশের সবচাইতে বেশী সংখ্যক ছাত্র-ছাত্রীর ভবিশ্যৎ তৈরি হয়। অর্থাৎ বেশীর ভাগ ছাত্র-ছাত্রী-ই সার্টিফিকেট পায় কিছু না শিখেই। প্রকৃত পক্ষে তারা মূর্খ-ই থেকে যায়।

    আমি যদি বলি এই প্রশ্নপ্রত্র ফাঁস, বই খুলে লেখার সুযোগ এবং এই পাইকারী হারে এ প্লাস কিংবা গোল্ডেন এ প্লাসের ঘটনা একই সূত্রে গাঁথা; আর তা কোন একটা শক্তিশালি মহল উপরে বসে কলকাঠি নেড়ে ঘটাচ্ছে, তাহলে কি খুব ভুল হবে? ভুল হবে না। কারনটা একটু খুলে বলি তা হলে বুঝতে সুবিধা হবে।


    মনে করুন একটা দেশে মোট একশ লোক আছে। তার মধ্যে রয়েছে নানা শ্রেনী। এখন ঐ দেশের দশজন লোক চাচ্ছে দেশের সকল কিছুই তারা নিয়ন্ত্রন করবে আর বাকি নব্বইজন লোক তাদের নিয়ন্ত্রনে থাকবে, তাদের ভয় পাবে সম্মান করবে, সেবাযত্ন করবে। আর ঐ দশজনই দেশে সকল সুবিধা সর্ব্বোচ্চটা ভোগ করবে। ননি ছানা যা খাওয়ার তারাই খাবে। আর ঘোলটা খাবে বাকি নব্বইজন। কোন কিছুইতে বাকি নব্বই জনের কেউ তাদের ধারে কাছে আসতে পারবে না। কি মৌলিক চাহিদায়, কি যৌগিক চাহিদায়।


    এখন এটা কি করে সম্ভব? নব্বই জন তো সংখ্যায় বেশী। আবার দেশটাও গনতান্ত্রিক দেশ। কি কারা যায়? ঐ দশজন ভাবলো বুদ্ধি দিয়ে এই নব্বইজনকে বশ করে রাখতে হবে। ঐ নব্বইজনের কাউকেই কিংবা তাদের পরবর্তী প্রজন্মের কাউকেই কোন কিছু বুঝতে দেয়া যাবে না, বোঝার সুজোগ দেয়া যাবে না। এজন্য কি করতে হবে? ঐ নব্বই জনকে শিখতে দেয়া যাবেনা পাশাপাশি আমাদের নিতে হবে উচ্চশিক্ষা। আর এই নোংড়া খেলায় মেতেছে এখন দেশের কিছু লোক। কারণ তারা চায় তাদের কাছাকাছি যেন কেউ যেতে পারে। কোন কিছু শিখে তারা যেন কিছু দাবি করতে না পারে। 

    এখনই এই দেশের অধিকাংশ মানুষ তাদের মৌলিক চাহিদা সম্পর্কে সচেতন না। আর এখনকার শিক্ষার এই দুর্গন্ধ যুক্ত সময়ে আমি হলপ করে বলতে পারি এসএসসিতে এ প্লাস পাওয়া শতকরা ৬০ ভাগ ছেলে মেয়ে মৌলিক চাহিদা কি সেটাই জানে না। এখন সে কি করে বুঝবে যে সে কি কি থেকে বঞ্চিত? যদি নাই জানে তাহলে দেশের মাথা ঐ দশজনের কোন ঝামেলাও নেই। এই কারনেই এই গনহারে এ প্লাস দেয়া কিংবা প্রশ্ন ফাঁসের খেলা। যদি কেউ হিরোইন খেয়ে গোল্ডেন এ প্লাস পেয়ে যায় তাহলে সে লেখা পড়া করতে যাবে কোন দুঃখে? আর যদিও দুএক লাইন পড়তে হয় তা হলে তা ফাঁস হওয়া প্রশ্ন দেখে আগের রাতে চোখ বুলিয়ে গেলেই হবে। তার উপর তো খাতায় কালির দাগ থাকলেও নম্বর দেয়ার নিয়ম তো আছেই।




    এখন পর্যন্ত এই প্রশ্নপ্রত্র ফাঁস হওয়া নিয়ে নানা পত্রিকায় কলামে টকশোতে শিক্ষা মন্ত্রীকে দায়ী করে বা তার দায়িত্বে অবহেলা বিষয়ক নানা কথা তো হয়েছেই বা এখনও হচ্ছে। আপনাদের বলছি এইযে প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়েছে তাতে শিক্ষা মন্ত্রির ছেলে মেয়ে কিংবা কাছের আত্মিয় স্বজন কি কোন ক্ষতির সম্মুখিন হয়েছে? হয়নি। কারন তারা পড়ে ইংলিশ মিডিয়ামে। এখন পর্যন্ত কয়জন মন্ত্রীর ছেলে মেয়ে সাধারন বাংলা মাধ্যম থেকে পাশ করেছে? তো তাদের অসুবিধা কোথায়? একজন শিক্ষামন্ত্রী কত বড় ‘ইয়ে’ হইলে পরিক্ষার সময় ফেইসবুক বন্ধ রাখতে বলতে পারে? মানে বিষয়টা এমন যে প্রশ্ন তো ফাঁস হবেই ফেসবুক তা ছড়াতে যাবে কেন?

    প্রশ্ন পত্রে সামান্য বানান ভুলের জন্য কোরিয়ার শিক্ষামন্ত্রী জনগনের কাছে ক্ষমা চেয়ে পত্রত্যাগ করেছেন। এই খবর আর আমাদের দেশের এই ফাঁসের খবর একই পত্রিকায় হয়তো পাশাপাশি ছাপিয়েছিলো। শিক্ষামন্ত্রী আপনি তো দৈনিক পত্রিকা পড়েন, পড়েন না? যখন আপনার এই কলঙ্কিত কর্মজজ্ঞ আর কিম সাং-হুন মহানুভবাতার উদাহণের চিত্র একত্রে পাশাপাশি দেখেছেন তখন আপনার মনে কি হয়েছিলো? ঠিক আপনার ঐ সময়ের ভাবনাটা কি ছিলো আমার খুব জানতে ইচ্ছা করে। আপনার কি একটুও লজ্জা হয়নি? আপানারা যারা মন্ত্রি মিনিষ্টার হন তাদের মায়েরা কি জন্মের সময় চোখে কাজল দেয়না? আপনি এখনও চেয়ারে বসে আছেন- কয় জেনারেশন নষ্ট করতে চান? আপনার বিলম্ব জাতিকে লুলা করে দিচ্ছে।


    এখন প্রায় সকল মাল্টি ন্যাশনাল কোম্পানী তাদের জব সার্কুলারে দিয়ে দেয় এ লেভেল ও লেভেল অগ্রাধিকার পাবে। কিন্তু এটা ঠিক যে কোন ইন্টারভিউতে যদি ইংলিশ মিডিয়ামের ছেলে মেয়েরা সাধারন ছেলে মেয়েদের সাথে অংশ গ্রহন করে তবে ইংলিশ মিডিয়ামের স্টুডেন্টদেরই চাকরী হয়। কারন চাকরি দাতারা জানে এখনকার ছেলে মেয়েরা কি করে পাশ করেছে। বছর চারেক আগেও কথাটা এরকম ছিলো যে পরীক্ষা দিলেই পাশ আর এখন পরীক্ষা দিলেই এ প্লাস। প্লাস পেতে হলে পড়াশুনা করতে হবে এমন কোন কথা নেই। শিক্ষাবোডের্র কন্ট্রলার, চেয়ারম্যান পরীক্ষকদের বলে দেয় খাতায় কালো দাগ থাকলে সেখানে শতকরা আশিভাগ নম্বর আপনারা দিবেন। নম্বর তো আর আপনাদের বাবার সম্পত্তি না। যদি নম্বর না দিতে পারেন তাহলে খাতা রেখে যান। এই কথার মানে কি? এখন তো ছাত্র ছাত্রীরা নিজেরাই অবাক হয়ে যায় নিজের ফলাফল দেখে।


    মজার বিষয় হচ্ছে এতে কিন্তু ছাত্রছাত্রী’র বাবা মা বেশ খুশি। তারা মোটেই চিন্তিত নয়। আমার ছেলে এপ্লাস পেয়েছে এই কথাটা বলতে পারাটাই তার জন্য সব চাইতে বড় বিষয়। আবার এই অভিবাভকই এক সময় দেশকে গালী দেবে যখন তার এই সাটিফিকেট ধারী মূর্খ ছেলে যখন চারকীর ইন্টারভিউতে ইংলিশ মিডিয়ামের ছেলে মেয়েদের কাছে ধরা খাবে।

    তাহলে কখনও কি আসবে সুদিন?
    এদেশের ১০০% শিশুকে ছোট বেলায় একটি প্রশ্নের মুখোমুখি হতেই হয় আর তা হল -বড় হয়ে তুমি কি হতে চাও?
    ৯৯.৯৯ ভাগ শিশু উত্তর দেয় তিনটি – ডাক্তার হতে চাই, ইঞ্জিনিয়ার হতে চাই, পাইলট হতে চাই। এই তিনটি লক্ষ্য তাদের বাবা মায়ের। শিশুটির একদম-ই নয়। শিশুটি যখন তার ভবিষ্যৎ লক্ষ্যের কথা বলে তখন আদতে সে বোঝেই না যে আসলে ভবিষ্যৎ কি আর লক্ষ্য কি? আমাদের দেশের সকল পিতামাতাই তাদের সন্তানের আলোয় আলোকিত হতে চান। তারা চান তাদের সন্তানেরা যেন তাদের মুখ উজ্জ্বল করতে পারে। বাবা মায়ের বদ্ধমূল ধারনা হয়ে যায় সন্তানেরা শুধু মাত্র ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার কিংবা পাইলট হলেই বাবা মায়ের মুখ উজ্জ্বল হবে। সন্তান অন্য কোন পেশায় গেলে ঔজ্জ্বল্যয় ঘাটতি হবে। ক্লাশ এইট থেকে নাইনে ওঠার সময় সেই সন্তান যখন অঙ্কে পায় ৪৭ আর বিজ্ঞানে পায় ৪০ তখন বাবা মায়ের স্বপ্নটা ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার আর পাইলট থেকে টার্ন করে যায় বাংলাদেশ কর্ম কমিশন সচিবালয়ের দিকে, অর্থাৎ তারা তখন বিসিএস ক্যাডারের গর্বিত পিতামাতা হওয়ার চিন্তা করেন। বস্তুত সন্তান কি হতে চায় তার দিকে বাবা মা কখনও-ই ভ্রুক্ষেপ করেন না।


    আমাদের দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা এমনিতেই জর্জরিত। তার উপর পরিবারের এমন চাপিয়ে দেয়া স্বপ্ন পূরণ করতে গিয়ে ঝরে পরে লাখ লাখ শিক্ষার্থী। বর্তমানে দেশের স্নাতক পর্যায়ের ছাত্রদের মধ্যে ৬৫% ছাত্র-ই পরে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে। যা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের আওতাভুক্ত নয়। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কচ্ছপ গতি আর সরকারী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের স্বল্পতাই দেশের ৬৫ ভাগ ছাত্র-ছাত্রী কে প্রয়জনের তুলনায় অধিক ফি দিয়ে নাম সর্বস্ব বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে নাম মাত্র শিক্ষা গ্রহনের বিনিময়ে সার্টিফিকেট সংগ্রহ করতে সক্ষম হয় যা আসলে টাকা দিয়ে সারটিফিকেট কেনার নামান্তর। ছাত্রটা আসলে অশিক্ষিতই থেকে যায়। 



    বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ব্যবস্থার দ্রুত গতির উদাহরন দিতে গিয়ে অনেকে বলে থাকেন যেদিন দুনিয়া ধ্বংস হবে সেদিনও যদি এক্সাম থাকে তাহলে এক্সাম হবে। ফলে একটি স্টুডেন্ট নির্দিষ্ট সময়ে তার স্নাতক বা স্নাতকোত্তর পাশ করে ফেলে। বেকারত্বের ন্যাশনাল গ্রীডে যোগ হয় কিছু তথা কথিত শিক্ষিত বেকার। তখন তারা বাবা মায়ের মুখের মাস্কারার বদলে হয়ে যায় মেসতা। বাবা মায়ের মুখ আর উজ্জ্বল হয় না। তখন অধিক পয়সা ওয়ালা বাবা মায়েরা মোটা অঙ্কের উৎকোচ নিয়ে খুঁজতে থাকেন একটি নিরাপদ সরকারী চাকরি। দুর্নীতির হাতে খড়ি নিয়ে সরকারী চাকরিতে যোগ দেয় কিছু মূর্খ, অথর্ব, নেশা খোর। নিজের অতীত ভুলে গিয়ে তখন এরা ঘুষ খেতে থাকে আর দিন কে রাত আর রাত কে দিন করার সপ্নে বিভর থাকে। মাঝে একটা বিরাট অংশ থকে তারা সারা জীবন পার করে দেয় বেসরকারি চাকরি করে। তারা সারা জীবন এটা ভেবে জীবন পার করে
    ” একদিন আসবে সুদিন………”


    কিন্তু সব মিলিয়ে একটু হিসেব করেন। আমাদের মাথার উপর কি বিপদ ঝুলছে। দিনকে দিন বেড়ে চলছে বেকারত্বের হার। বাড়ছে অভাব। আর অভাব থেকে তৈরি হচ্ছে নানা ধরনের অপরাধের। আপনার ছেলে কিংবা মেয়েটি কিন্তু শিক্ষিত হচ্ছে না সে হচ্ছে সাটিফিকেট ধারী মূর্খ। আর তা বানাচ্ছে আমাদের দেশের সার্থপর মানুষেরা। এটাই এদেশের জন্য অশনি শংকেত।

    কপিরাইটঃ সাইফুল বাতেন টিটো

    No comments