ঐ হুজুরকে আমি তীব্র ঘৃণা করি ।। সাবেক মাদ্রাসার ছাত্রের আত্মকথন
একটা সিরিয়াস বিষয় নিয়ে কথা বলতে চাই আশা করি উত্তর দেবেন।
আমি যখন হিফজ মাদ্রাসায় পড়েছি সে সময়টা ছিলো। ২০০৩ সাল থেকে ২০০৭ পর্যন্ত।
এবং ওই মাদ্রাসায় থাকাকালীন প্রতিটা সেকেন্ড আমি তীব্র ঘৃণা করি। ঘৃণা করি ওই হুজুরকে যে লোক ভোর ৪ টায় আমাকে দেরী করে উঠার কারণে মেরে রক্তাক্ত করেছে। আমার তখন একটা অসুস্থতা ছিলো। যে কারণে আমি বিছানায় পি করে দিতাম৷ এই অসুস্থতার জন্য চিকিৎসা না করিয়ে আমাকে প্রতিদিন সকালে মারত। বারান্দায় আমার সিট দিয়েছিলো। ভাবতো মারলে সুস্থ হয়ে যাব। এই মার খাওয়ার ভয়ে আমি ঘুমাতাম না।
বড় মানুষের পাশে একসাথে সিট দিয়েছিলো। মাত্র এক বিঘা ৪ হাত জায়গা ছিলো আমার ঘুমানোর জন্য। ওই সময় অনেক সময় ব্যাড টাচের স্বীকার হয়েছি। ঘুমের মাঝে হাত পা কারও উপরে উঠে গেলে আমাকে মারতো।
এমন কোন দিন নাই আমি মার খাই নাই।
একবার ২৭ পারার ২ নং পৃষ্ঠার এক আয়াতে ৩ আলিফ টান কে দুই আলিফ টানার কারণে এমন মাইর দিছিলো। আমার হাত এর দুইপাশে রক্তাক্ত হয়ে গিয়েছিলো।
২০০৩ সালে আমার বয়স ছিল ১০। আমার কোন শৈশব নাই। জঘন্য নোংরা একটা অভিজ্ঞতা। যেটা মনে পড়লে আমি এখনো কেমন যেনো একটা ঘোরের মাঝে পড়ে যাই।
আমি কিন্তু কোন এতিমখানায় পড়ি নাই। আমার ভাই ওই সময় ১৭০০ টাকা বেতন দিয়ে পড়াত। ২০০৩ সালে ১৭০০ টাকা অনেক টাকা। কিন্তু ওই হুজুর কি করাতো... প্রতি রোজায়, প্রতি শুক্রবার। একটা লিফলেট হাতে ধরাইয়া দিয়ে মসজিদের সামনে টাকা কালেকশনে পাঠাইত। একবার মিরপুর ৭ নাম্বারে এক মসজিদের সামনে কালেকশন করার সময় আমাকে এক লোক জিজ্ঞাসা করছিলো। তোমাকে দেখলে তো ভালো ঘরের ছেলে মনে হয়, তুমি ভিক্ষা করতেছো কেনো।
মিরপুরে ওই সময়ে এমন খুব কম মসজিদ আছে যেখানে আমি কালেকশনের জন্য নামাজের পড়ে হাত পাতাইতে পাঠায় নাই।
আমাকে ওইদিন একজন জিজ্ঞাসা করলো তুমি এতো ভালো লাইনে থাকতে এই ভন্ড হইছো কেন? প্রায় মানুষই জিজ্ঞাসা করে। যারা আমাকে জানে চেনে। আমি জাস্ট কিছু অভিজ্ঞতার কথা শেয়ার করলাম।
আমারে বলতো শিক্ষক মাইর দিলে ওই জায়গা জান্নাতে যায়। আমার মনে হয় না আমার শরীরে এমন কোন জায়গা আছে সেটা জাহান্নামে যাবে। আর বাসায় ভয়ে বলতাম না। কারণ জাহান্নামের ভয় দেখাইত।
এখন হয়ত এমন নাই তাই আপনাদের ছেলে মেয়েকে মাদ্রাসায় দিয়া একটু খোজ রাইখেন ভাইয়ারা।
আজ একথাগুলো মাথায় আসলো কারণ......
আজ সকালে যখন অফিসের জন্য বের হই, তখন বাজে সকাল ৬.৪৫
রাস্তায় দেখলাম মাথায় টুপি পড়া, বয়স হবে ৮/৯/১০, হয়ত মাদ্রাসার ছাত্র হবে। এই শীতের মাঝে কেউ ওদেরকে কালেকশনে বের করেছে। ছেলেগুলো শীতে কাপছিলো। কাইন্ড অফ এটা আরেকটা ইমোশনাল ব্লাকমেইল যে, শীতের মাঝে কালেকশন।
আমার কাছে টাকা চাইলো। আমি তাড়াহুড়ো করে চলে যাওয়ায় টাকাটা দেইনি। বা দেয়ার ইচ্ছা করেনি।
বাসে বসার পর থেকে আমার মাথায় একটা বিষয় ঘুরছে, এই বাচ্চাগুলো কি একটা ট্রমার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। আমি আমাকে দেখছিলাম এই ছেলেগুলোর মাঝে।
আরামের ঘুম বাদ দিয়ে এতো ছোট বাচ্চা ছেলেগুলো রাস্তায় নেমে আসছে, ওয়াজ মাহফিল, মাদ্রাসা চালানোর কালেকশন উঠানোর জন্য।
এইভাবে কালেকশন এর টাকা উঠিয়ে যে মাহফিল হয়। সেটায় আসলে কি লাভ??? এই বিষয়ে বড় আকারে কথা উঠে না কেনো? মাদ্রাসার ছাত্ররা কি মানুষ না?
আমার জানামতে এখন কিছু মাদ্রাসা হয়েছে যেখানে নির্যাতন করে না।
মিরপুর কালশীর এখানে এমন একটা মাদ্রাসা আছে।
আমার উদ্দেশ্য কারো ধর্মানুভুতিতে আঘাত করা না। কেউ আঘাত পেলে আমায় মাফ করে দেবেন।
No comments