Header Ads

CODESMITE
  • সাম্প্রতিক লেখা:

    ওথেলো সিন্ড্রম ।। উপন্যাস ।। পর্ব - ০১

    রাত দুইটা উনত্রিশ। শোবার ঘরে দুজন দুপাশ ফিরে শুয়ে আছে মলি আর রিয়াজ। দুজনেই ঘুমাচ্ছে। ঘরে ঘড়ির কাঁটার টিক টিক আওয়াজ ছাড়া আর কোন শব্দ নেই। আজ ফেব্রুয়ারী মাসের নয় তারিখ। শীত চলে গেলেও এখনও ফ্যান চালাতে হয়না। রিয়াজের সাইড টেবিলটা জ্বলছে আর পাশে আধা বন্ধ একটা বই পড়ে আছে। ঘরের মধ্যে আলোর উৎস ঐ রিয়াজের সাইড টেবিল। বা পাশে কাত হয়ে ঘুমন্ত রিয়াজ চিৎ হয়ে শুইলো। হঠাৎ  করে সে যাহ এই যাহ যাহ বলে ঘুমন্ত অবস্থাতেই আধা চিৎকার করতে থাকলো আবার চুপ চাপ। চোখের পাতা দুটো বেশ কাপছে তার। আর রিয়াজ শুরু করলো এই যাহ যাহ সব সামনে থেকে। বিষয়টির কারণে ঘুম ভেঙ্গে যায় মলির। সে উঠে বসে। স্বামীর এমন আচরণে হতভম্ব মলি।
    এই কি হয়েছে তোমার এই অনির আব্বু। এই তোমাকে বোবায় ধরেছে? ওঠো ওঠো অনির আব্বু। এবার আরো জোরে কিছু অদ্ভুৎ ও ভীতিকর শব্দ করতে করতে উঠে বসে রিয়াজ।
    কি হয়েছে তোমার? আবার সেই কোন দুঃস্বপ্ন দেখেছো তুমি? মলি তার সাইডে টেবিলের ল্যাম্পটি জ্বালায়।
    Photo Credit: BBC



    রিয়াজ উদ্ভান্তের মতো তাকিয়ে আছে।
    এই অনির আব্বু কি হয়েছে তোমার? আবার দুঃস্বপ্ন দেখেছ? মলি রিয়াজের কপালে মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়। রিয়াজ কোন কথা বলে না।
    একদম ঘেমে গেছো। দাড়াও ফ্যানটা চালিয়ে দেই। মলি উঠতে গেলে রিয়াজ মলির হাত ধরে থামায়। মলি এবার আরো একটু সিরিয়াস হয়ে ওঠে। রিয়াজ কোন কারণেই ভীতু টাইপের ছেলে না।
    সে কি এমন দুঃস্বপ্ন দেখে যে ঘুম ভেঙ্গে যায়, ঘেমে যায়। আগেও এমন হয়েছে তিন চার বার। প্রত্যেকবারই পাশে মলি ছিলো এবং তার ঘুমও প্রত্যেকবার ভেঙ্গেছে। রিয়াজ বলে সে দুঃস্বপ্ন দেখে। কিন্তু কি দেকে তা বলে না। ভূত প্রেত জ্বিনে ধরা, বোবায় বুকে চেপে বসা গভীর রাতে এসবে মলির যা একটু বিশ্বাস ছিলো রিয়াজের সাথে প্রেম হওয়ার পরপর তাও শেষ হয়ে যায়। রিয়াজ পেশায় একজন ডিপ্লোম ইঞ্জিনিয়ার। কিন্তু বেশ পড়াশুন করা উদার মেন্টালিটির বস্তুবাদে বিশ্বাসী ছেলে। মলি এখন আপাদ মস্তকে দৃহিনী হলেও রিয়াজ এক সময় তাকে অনেক শিখিয়ে পড়িয়ে কালো কাপড়ে আটকে থাকা গতানুগতিক মেয়ে থেকে সাবলিল ও আধুনিক করে তুলেছে। শুরু থেকেই বাংলায় এমএ পাশ মলিকে চাকরীতে উৎসাহিত করে এসেছে। গত বছরও কৃষি ব্যাংকে পরীক্ষা দিয়েছে মলি। একমাত্র ছেলে অনিকেত অনির্বাণকে সামলেও মলি রিয়াজের পিড়াপিড়িতে। সেই সদা মুক্ত স্বাধীনচেতা আধুনিক রিয়াজ কি এমন স্বপ্ন দেখে যা তার গভির ঘুমকে ভাঙ্গিয়ে দেয়?
    এক গ্লাস পানি দাও।


    এক চুমুকে পুরো গ্লাস শেষ  করে মলিকে ফেরৎ দিতে দিতে বলে
    সে স্বপ্নটা আবার দেখলাম মলি।
    কোন স্বপ্নটা? তুমি তো আমাকে কোন স্বপ্নের কথাই বলনি। এত জানতে চাইছি। তোমার মত মানুষ  কি এমন স্বপ্ন দেখে যে মধ্যরাতে ঘুম ভেঙ্গে যায়? আমাকে বলো তুমি।
    আমি তোমাকে বুঝিয়ে বলতে পারবো না। আমি কি দুঃস্বপ্ন দেখি।
    ঠিক আছে বলতে হবে না। আরো পানি খাবে?
    না একটা বাথরুমে যাবো।

    রিয়াজ বিছানা থেকে নেমে সোবার ঘরের এটাস্ট বাথরুমে গেলো। বের হয়ে আবার এক গ্লাস পানি খেয়ে গেলো একটু উকি দিতে। রিয়াজ মলির একমাত্র ছেলে অনিকেত অনির্বাণ। বয়স ছয়। কেজি ওয়ানে পড়ে। রিয়াজ হেটে ছেলের কাছে গেলো। দুই হাত বাম গালের নিচে দিয়ে শুয়ে আছে। এক মাথা কালো চুল। একদম মায়ের মতো হয়েছে। রিয়াজ ঝুঁকে ছেলেকে চুমু দিতে যাবে ঠিক এমন সময়  দেখে সেখানে অনি না সেই শিশুটির মুখ দেখে যে মেয়েটি গভীর ঘুমের মধ্যে আসে। চমকে বিদ্যুৎ পিষ্টের মত ছিটকে এলো রিয়াজ। সাইড টেবিলে রাখা টেবিল ল্যাম্পটা পড়ে যায়। ঘুম ভেঙ্গে যায় অনির।

    কি হয়েছে বাবা?
    কিছু না বাবা তুমি ঘুমাও।
    কি হলো লাইটটা পড়ে গেলো কি করে? রুমের লাইট জ্বালিয়ে জানতে চাইলো মলি।
    রাতের বাকি অংশটুকু ভালোভাবে ঘুমাতে পারল (না) রিয়াজ। সকাল বেলা নাস্তা করে অফিসে চলে গেলো। লাঞ্চের পর ফোন করল মলি।
    খেয়েছো?
    হুম। তোমরা খেয়েছো?
    আমি খাওয়া শেষ করে তোমাকে ফোন দিলাম। তুমি কি পাঁচ সাত মিনিট কথা বলতে পারবে সময় হবে?
    হবে বলো।
    নিশ্চই বলো
    দেখ কথাটা আমি কাল রাতেই তোমাকে বলতে চেয়েছিলাম। পরে ইচ্ছা করে ভাবলাম সকালে বলব, কিন্তু সকালে তো আমি অনিকে নিয়ে স্কুলে চলে গেলাম।
    আহা আসল কাটা বলো না মলি।
    তুমি বিষয়টি অন্যভাবে নিওনা।
    না নেব না বলো।
    তুমি আজ অফিস থেকে ফেরার পথে শান্তনু ভাইয়ের চেম্বার হয়ে ফিরবে?
    কেন? তোমার কি ধারণা আমার মাথা খারাপ হয়ে গিয়েছে?
    এই যে তুমি না বুঝেই অন্যভাবে নিলে। তুমি নিজে এত আধুনিক একজন মানুষ।
    এর পর অনেক কথা বলল মলি। শান্তনু রিয়াজের বন্ধু। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ক্লিনিক্যাল সাইকোলজীতে এমএ শেষ করে ৬ বছর ধরে আমেরিকায় পড়ে এখন পিজি হাসপাতালে রুগী দেখছে।


    আর রিয়াজ শেষে মলিকে এই বলে নিবৃত্ত করল যে বিষয়টি তেমন সিরিয়াস না। সিরয়াস হলে রিয়াজ অবশ্যই শান্তনুর সাথে কথা বলবে। রিয়াজ এখন একটি ব্যাংকের আইটি কর্মকর্তা। হিসাব নিকাশ মেলানোর ঝামেলা থাকে না বলে সে পাঁচটায়ই বের হতে পারে। আজ ফেরার পথে অফিসের গাড়ীতে ফিরলো। নেমে পড়লো রমনা পার্কে। এই বিকেলে বিশাল পার্কেও কোথাও নিরিবিলি নেই। স্বাস্থ্য সচেতনদের দৌড়াদৌড়ি থেকে প্রেম সচেতনদের দৌরাত্ব সর্বত্র বিরাজমান। বাসায় অনি মলি নেই।
    মলি তার খালায় বাসায় গেছে। এক ঠোঙ্গগা বাদাম নিয়ে চিবুচ্ছে আর ভাবছে কি দুরাবস্থা ছিলো রিয়াজের। অর্থের অভাবে সংসার ভাঙ্গে ভাঙ্গে এমন। এখন ওরা থাকে মিরপুরের পীরের বাগে। মলির এক বান্ধবীর খালাতো বোনের সাথে সাবলেট থাকে। একটা গাড়ীর আমাদনীকারী কোম্পানীতে তখন রিয়াজ জুনিয়র আইটি অফিসার। বেতন মাত্র ছয় হাজার পাঁচশ টাকা। তারপর হঠাৎ একটি দুর্ঘটনা। বাসা পাল্টালো ওরা। সেই বাসায় আচমকা  মলির সাথে দেখা হলো তার এক মামার সাথে। সে কিনা রিয়াজকে এই চাকরীটা ম্যানেজ করে দিলো। দিন বদলালো রিয়াজ মলির। পরের বছর ই ঘর আলো করে অনি এলো চাকুরীতে ধাই ধাই করে উন্নতি করতে লাগলো। এখন রিয়াজ একটা ব্যাংকের এ্যাসিসট্যান্ট ম্যানেজার হওয়ার পর সে আলাদা ক্যাবিন পেয়েছে, বাস বাদ দিয়ে সে এখন অফিসের প্রাইভেট কার পা। ম্যানেজার হলে ফ্ল্যাট দিবে। একমাত্র সন্তান অনিকেত অনির্বাণ পড়ছে কে.জি ওয়ানে। ভালো ছাত্র, ভদ্র ছেলে। মলি অত্যন্ত ভালো মেয়ে বরেই এখন এত ভালো একটি সংসার হয়েছে রিয়াজদের। মলির বাড়তি কোন প্যান প্যানানি নেই এক বছরে দুয়েকবার ঘুরতে যাওয়া ছাড়া। বেতনের সিংহভাগই রিয়াজ মলির হাতে তুলে দেয়। সব মিলিয়ে মাসে এখন রিয়াজ বেতন তোলে চুয়াত্তুর হাজার টাকা। রিয়াজের নিজের কোনই সেভিংস নাই জানে মলিরও নাই। তবে চাকরীতে ফিউচার আছে। ওর যে পেশা তাতে রিটায়ার্ডের পরও ফিউচার আছে।


    কিন্তু এখন কেন এমন দুঃস্বপ্ন? কেন এই উৎপাত? চারিদিকে অন্ধকার নেমে এসেছে। রিয়াজ বাসার উদ্দেশ্যে রওনা হলো। বাসায় ফিরে দেখে মলিরা এখনও ফেরেনি। কাপড় চোপড় পাল্টে ফ্রেস হয়ে রুমে এসে খাটে হেলান দিয়ে ফোন করল মলিকে।
    কখন ফিরবা?
    খালাম্মা না খাইয়ে ছাড়বে না।
    রান্না প্রায় শেষ। আমরা খেয়ে তোমার জন্য খাবার নিয়ে আসছি।
    ফোন রেখে ফ্যানটা একদম কমিয়ে দিয়ে বিছানায় গা এলিয়ে দিলো। ক্লান্ত শরীর। মলি বাসায় থাকলে হয়তো এখন এক কাপ চা দিতো। এক সময় দুচোখের পাতা এক হয়ে এলো।
    কতক্ষণ ঘুমিয়ে ছিলো জানে না। দরজায় মৃদু আঘাতের শব্দে ঘুম ভেঙ্গে গেলো রিয়াজের। বুঝতে পারলো মলিরা চলে এসেছে। লুঙ্গি ঠিক করে উঠতে উঠতে দরজার ওপাশ দিয়ে করাঘাতের সাথে কথাও এলো আর এখনই গায়ের সমস্ত পশম দাড়িয়ে গেলো।
    মোটা চাচ্চু একটু দরজাটা খোল প্লীজ তোমাদের বারান্দায় আমার বলটা।
    এটা কি করে সম্ভব? রিয়াজ নিজের গায়ে নিজে চিমটি দিলো। না সে স্বপ্ন দেখছে না। তবে কি মলি আর অনি কোনভাবে মজা করছে রিয়াজের সাথে? তা কি করে সম্ভব রিয়াজ তো মলিকে কখনই বলেনি সে কি স্বপ্ন দেখে। আবার দরজায় নক হলো ও চাচ্চু, মোটা চাচ্চু। 
    রিয়াজ এবার খেয়াল করলো পুরো ঘর অন্ধকার। বিদ্যুৎ নেই। অনেক সাহস নিয়ে জিজ্ঞেস করলো 
    কে ওখানে?
    মোটা চাচ্চু আমি সুপ্তি একটু দরজাটা খোল না প্লীজ.....।


    দরজায় আঘাতের শব্দ ক্রমশ বেড়েই চলছে। অন্ধকারে দরজা ধাক্কানোর শব্দ সেই সাথে চাচ্চু চাচ্চু বলে চিৎকারে রিয়াজ যেন অস্থির হয়ে গেলো। সিদ্ধান্ত নিলো সে দরজা খুলবে। খুলে দেখবে ওপাশে কি আছে। দেয়াল হাতড়ে দরজা, দরজার সিটকানি খুঁজে পেলো রিয়াঝ। ওপাশ থেকে কেউ দরজা ধাক্কাছে আর চাচ্চু চাচ্চু বলে চিৎকার করছে। শব্দ গুলো যেন প্রতিধ্বনিত হয়ে ঘরময় ছড়িয়ে যাচ্ছে। সিটকানির খোলার অংশ ধরে টান দিতে যাবে এমন বিদ্যুৎ চলে এলো। সারা ঘর ভরে গেলো আলোয়। সাথে সাথে বেজে উঠলো কলিং বেল। রিয়াজ দরজা খুলে দেখে কিছুই নেই। বাসার কলিংবেল বাজছে। দরজা খুলে দেয়ার সাথে সাথে অনি ঝাপিয়ে পড়লো বাবার উপর।
    কি তোমাকে এমন দেখাচ্ছে কেন? স্বামীর দিকে তাকিয়েই বলল মলি।
    একটু ঘুমিয়ে পড়েছিলাম।
    তা এতো ঘেমেছো কেন? কারেন্ট ছিলো না?
    না, মাত্র আসলো।
    যাও হাত মুখ ধুয়ে আসো। খালা তোমার জন্য ভূনা খিচুড়ি আর হাসের মাংস পাঠিয়েছে।
    মলি আমার কিছু খেতে ইচ্ছে করছে না খালি বমি পাচ্ছে। আমি আবার ঘুমাবো।
    কিছু না খেয়ে ঘুমাতে যেওনা প্লীজ।
    মলির পিড়াপিড়িতে খাবার টেবিলে বসেই বমি করতে লাগলো। সারা রাত মলি রিয়াজ দুজনেই র্নিঘুম কাটিয়ে দিলো। কিছুই খেতে পারলো না রিয়াজ। সকাল বেলা মলি স্বাভাবিক সময়ে ঘুম থেকে উঠলো। মায়ের আর আরাম করে কোনদিন ঘুমানো হয় না। দশটার দিকে ঘুম থেকে উঠেই রিয়াজ মলিকে বলল
    খেতে দাও, ক্ষুধায় মরে যাচ্ছি।
    হাত মুখ ধৌ। না কি এভাবেই খাবে?
    রিয়াজ আরাম করে খেলো। গত কালের খিচুড়ি আর হাসের মাংস বেশ আরাম করেই খাচ্ছে রিয়াজ দেখে মলির খুব ভালো লাগলো। খেতে খেতে হঠাৎ রিয়াজ মলিকে বলল
    আচ্ছা মলি তুমি কি আত্মায় বিশ্বাস কর?
    তোমার সাথে পরিচয় হওয়ার আগে করতাম এখন করি না।
    সত্যি বলছ?
    হ্যা, মিথ্যে কেন বলব?
    ধরো যদি কেউ অপঘাতে মারা যায় তাহলে তার আত্মার কি হয়?
    আচ্ছা অনির আব্বু তোমার কি হয়েছে বল তো? তুমি তো এসব নিয়ে কখনও কথা বলতে না। কি হয়েছে তোমার বলো তো? তুমি কি এমন স্বপ্ন দেখ? এত খুচিয়ে খুচিয়ে জিজ্ঞেস করি কিছুই বলো না, কি হয়েছে তোমার?
    আমার কিছু হয়নি মলি।


    খাবার টেবিলে আর কোন কথা না বলে চুপচাপ গিয়ে শুয়ে পড়লো। মলি ফোন করালো ড. হাসান শান্তনুকে। রিয়াজ নিজেই বলল যা বলার। সব শুনে ড, শান্তনু বলল
    দোস্ত তোকে একটা কথা বলি যা আগে কখনও বলা হয়নি।
    বল।
    আমি তো তোর ট্রিটমেন্ট করতে পারবো না।
    কেন? পারবি না কেন?
    পারবো না বলতে এটা আমাদের প্রফেশনাল ইথিক। আমরা নিকট লোকজনদের ট্রিটমেন্ট করিনা।
    তাহলে? আমার ট্রিটমেন্ট হবে না?
    নিশ্চই হবে। আমি করলে যাত ভালো হতে তার চেয়ে শত গুনে ভালো হবে। আমি তোকে আমার স্যারের কাছে পাঠাচ্ছি। উনি আমারও টিচার। তোকে হয়তো ওনার কথা কখনও বলেছিও বটে। ওনার নাম ড. এ সরদার।
    হ্যা হ্যা বলেছিলি। চিনি আমি ওনাকে। 
    ওকে তাহলে তো সমস্যাই নেই। আমি স্যারের সাথে কথা বলে তোকে জানাচ্ছি। 
    ওকে দোস্ত থ্যাংকস।


    সে রাতে যে ঘটনাটি ঘটল তাতে মলি চূড়ান্ত রকমের ভয় পেয়ে গেলো। মলি রিয়াজ প্রতি রাতের মত সে রাতেও শুয়ে ঘুমাচ্ছিলো। “মোটা চাচ্চু” মোটা চাচ্চু ডাকে ঘুম ভেঙ্গে যায় রিয়াজের। সে চোখ মেলে তাকায়। ঘুম ভাঙ্গার পর মারাত্মক একটা পঁচা দুর্গন্ধ এসে লাগে নাকে। কানে আসে আবার মোটা চাচ্চু। রুমে যে আলো রয়েছে তাতে মোটামুটি আশে পাশে কেউ থাকলে দেখার কথা। রিয়াজ বোঝার চেষ্টা করছে ডাকটা কোথা থেকে আসছে। এক বার মনে হয় ডান দিক থেকে একবার মনে বাম দিক থেকে। রিয়াজ মনে প্রাণে এটা বিশ্বাস করার চেষ্টা করছে যে যা হচ্ছে সব মিথ্যে। রিয়াজ যাকে দেখছে সে আসলে কেউ না । কেউ হতে পারে না। কারণ সে আজ হতে সাত আট বছর আগেই মারা গেছে। কিন্তু শিশুটির ডাক ক্রমশ বেড়েই চলছে। রিয়াজ সব দিকে চোখ ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে খুঁজছে শব্দের উৎস। রুমের কোনায় যেখানে ময়লা কাপড়রে ঝুড়ি থাকে সেখানে চোখ আটকে গেলো। খোনে ঝুড়ির উপরে বসে আছে সুপ্তি। চোখ দুটো বড় বড় করে তাকিয়ে আছে রিয়াজের দিকে। সাথে সাথে চোখ বন্ধ করে ফেলল রিয়াজ। এবার আবার ডাকা এলো মোটা চাচ্চু আমি এখানে। রিয়াজ তাকিয়ে দেখলো মেয়েটি বাথরুমের খালি জায়গাটায় উঠে রিয়াজের দিকে তাকিয়ে মিটমিট করে হাসছে।




    এটা কি করে স্বপ্ন হয়? ঐ তো মলি শুয়ে আছে পাশে। নিশ্বাসের শব্দ পর্যন্ত শুনতে পাচ্ছে রিয়াজ। এখন সে কি করবে বুঝে উঠতে পারছে না। সুপ্তি ওখানে উঠলো কি করে অত উচুতে? ভয় পেলো না মোটেও। ওখানে তো অনেক আরশলা মাকড়শা রয়েছে। মেয়েটা ভয় পাবে না? ও তো মারাত্মক ভয় পায়। এখনই মেয়েটাকে নামাতে হবে ওখান থেকে। নাহলে ভয় পেয়ে মরে যাবে। ওকে নামাতে হবে। রিয়াজ খাট থেকে নামলো। নেমে টয়লেটের কাছে যেতেই ওয়ার্ডোবের উপর থেকে বলে উঠলো “চাচ্চু আমি তো এখানে। রিয়াজ একটু দৌড়েউ সেখানে গেলো গিয়ে তােিকয় দেখে সেখানে নেই। বাথরুমের দরজা ফাক করে সেখান থেকে বলল “মোটা চাচ্চু তুমি খুবই বোকা”। আমি তো আসলে এখানে। এবার একটু তাড়াহুড়া করে রিয়াজ সেখানে যেতে গিয়ে টেবিলে রাখা পানির জগ ফেলে গিলো। রিয়াজ পিছনে না তাকিয়েই “এই দাড়াও সুপ্তি দাড়াও” বলে বাথরুমে ছুটলো। সাথে সাথে ঘুম ভেঙ্গে গেলো মলির। কিন্তু সে ঘুম থেকে উঠরো না। শুয়ে থেকে বোঝার চেষ্টা করলো বিষয়টি কি হতে চলেছে। মিনিট দুয়েকের মত চোখ খোলা রেখে মলি যা দেখল যা তা দেখলে যে কোন স্ত্রীর হৃদয় ভেঙ্গে খান খান হয়ে যাবে। রিয়াজ সারা ঘরে এমনভাবে দৌড়াচ্ছে আর নানা রকম কথা বলছে যা দেখে শুনে মনে হচ্ছে রিয়াজ ৪/৫ বছরের এক শিশুর সাথে লুকোচুরি খেলছে। “এই দাড়াও দাড়াও”, আহা ওখানে উঠোনা, এই কোথায় লুকালে, পড়ে যাবে নামো নামো। এরক আরো অনেক শব্দ কথা। শেষে একটি নাম শুনে আর থাকতে পারলো না মলি। যখন শুনলো রিয়াজ বলছে
    এই সুপ্তি ওখানে উঠলে কিন্তু পড়ে যাবে বলে দিচ্ছি। বাক্যটি শেষ হওয়ার সাথে সাথে মলিও বলে উঠলো
    সুপ্তি“ সুপ্তি এলো কোত্থেকে?
    মলি খাট থেকে নেমে রিয়াজকে জড়িয়ে ধরলো। কি হয়েছে অনির আব্বু তোমার? এমন করছো কেন?
    সুপ্তিটা যে আবার কোথায় লুকালো।
    কি বলছ আবল তাবল? হ্যাঁ? কিসের সুপ্তি? কোথায় সুপ্তি? সুপ্তি কোত্থেকে আসবে? কি হয়েছে তোমার? কান্নায় ভেঙ্গে পড়লো মলি। ধপ করে ফ্লোরে বসে পড়লো রিয়াজ। মলিও পাশে বসলো। মাথায় হাত দিয়ে, কিছুটা কান্না সংবরণ করে স্বামীর কাছে জানতে চাইলো তোমার কি হয়েছে অনির আব্বু?


    (চলবে....) 

    সকল ধরণের কপিরাইটঃ সাইফুল বাতেন টিটো

    No comments